সকালটা ছিল আর পাঁচটা দিের মতোই স্বাভাবিক। দৈনন্দিন ছন্দে এগোচ্ছিল শহর। আচমকাই তাল কাটল৷ কেঁপে উঠল শহর৷ শুক্রবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে জোরাল কম্পন অনুভূত হয়৷ আতঙ্ক ছড়ায় শহর কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। কয়েক সেকেন্ড ধরে কম্পনের ধাক্কা টের পাওয়া যায়—ঘরের ভিতরে পাখা, চেয়ার, টেবিল নড়ে ওঠে বলে জানান বহু মানুষ।
ভূমিকম্পের অভিঘাত অনুভূত হয়েছে কাকদ্বীপ, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ—এক কথায় গোটা দক্ষিণবঙ্গেই। কলকাতাতেও বহু আবাসিক এলাকায় মানুষ বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি৷
ভূমিকম্পের উৎসস্থল
ভূমিকম্পের মাত্রা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক দুই সংস্থার মূল্যায়নে সামান্য তারতম্য দেখা গিয়েছে। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS) বলেছে, রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৫.৫৷ অন্যদিকে, ভারতের ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (NCS) জানাচ্ছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭৷ উৎসস্থল ছিল বাংলাদেশের নরসিংদী শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম–দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূ-পৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।
শীতের সকালে আচমকা কম্পনে আতঙ্ক
কম্পন শুরু হতেই কলকাতায় বহু বাড়িতে সিলিং ফ্যান, টেবিল–চেয়ার, দেওয়ালে টাঙানো ছবির ফ্রেম এবং ঝাড়বাতি দুলে ওঠে। শীতের আমেজে অধিকাংশ বাড়িতে পাখা বন্ধ থাকায় ফ্যান নড়তেই অনেকেই কম্পন টের পান। আতঙ্কে বহু বাসিন্দা তড়িঘড়ি বাড়ি ও বহুতল থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।
বাংলাদেশেও প্রবল অনুভূতি
বাংলাদেশের বহু অংশেও ভূমিকম্প স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কম্পন শুরু হতেই মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তেও কম্পন নথিবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ সময় ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
কলকাতায় ভূমিকম্প সচরাচর নয়
কলকাতা ভূমিকম্পপ্রবণ শহর নয়। সাধারণত বাংলাদেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। তবে শুক্রবারের কম্পন তার তুলনায় শক্তিশালী, কারণ উৎসস্থল গভীরে ছিল না বলেই কম্পন বেশি জোরালো ভাবে বোঝা গিয়েছে—মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
সমাজমাধ্যমে আলোড়ন
ভূমিকম্পের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমাজমাধ্যমে ঘরে সিলিং ফ্যান–ঝাড়বাতি দুলতে থাকা ভিডিও, রাস্তায় ভিড় ও অফিস ভবন খালি করার দৃশ্য পোস্ট করেছেন বহু মানুষ।
এই সমস্ত ভিডিও বা ছবির সত্যতা সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে যাচাই করেনি।
পটভূমি
দুই মাস আগে ১৪ সেপ্টেম্বর অসমের ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গ কেঁপে উঠেছিল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৮। তার সামান্য প্রভাব দক্ষিণবঙ্গেও অনুভূত হলেও, শুক্রবার সকালের কম্পনের তুলনায় তা অনেক হালকা ছিল।


