স্কুল প্রাঙ্গণে পথকুকুরকে পিটিয়ে খুন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক!

কল্যাণী: নদিয়ার কল্যাণীতে স্কুল চত্বরে এক পথকুকুরকে (Stray Dog) নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও সামনে আসতেই…

স্কুল প্রাঙ্গণে পথকুকুরকে পিটিয়ে খুন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক!

কল্যাণী: নদিয়ার কল্যাণীতে স্কুল চত্বরে এক পথকুকুরকে (Stray Dog) নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পশুপ্রেমীরা ও সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে কল্যাণীর নেতাজি বিদ্যামন্দির (ফর বয়েজ) স্কুল। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যেয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে এক মৃতপ্রায় সারমেয় পড়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুল ইউনিফর্ম পরা একাধিক নাবালক ছাত্র ও প্রাপ্তবয়স্ক কয়েকজন ব্যক্তি। এরপরই দেখা যায়, তারা মিলে ওই অসহায় প্রাণীটিকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করছে।

   

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রাতেই একদল পশুপ্রেমী ও স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণী থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের দাবি তোলেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল, যাঁদের বিরুদ্ধে এই নির্মম ঘটনার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বয়ং। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে বেশ কয়েকজন ছাত্রেরও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতেই এই কাজ করা হয় এবং তিনি ছাত্রদের মারধরে উৎসাহিত করেন বলেও অভিযোগ।

তবে এই নারকীয় ঘটনা কেন ঘটানো হল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ বলছেন, কুকুরটি হয়তো স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়েছিল বা কাউকে ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু তাই বলে এভাবে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা – এমন বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বলে মত এলাকাবাসীর।

পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনা পশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। প্রাণীর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা দেখানোয় দোষীদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাণ্ড ঘটানোর সাহস না পায়।

Advertisements

পুলিশ জানিয়েছে, সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শিক্ষাঙ্গন এমন একটি জায়গা যেখানে শিশুদের সহানুভূতি ও মূল্যবোধ শেখানোর কথা। কিন্তু সেখানে যদি শিক্ষকেরা নিজেরাই এমন কাজ করেন, তবে সমাজের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে?

স্থানীয় মানুষের মতে, শুধু শিক্ষকের চাকরি খারিজ করাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হওয়া উচিত। পাশাপাশি, নাবালকদের মানসিক কাউন্সেলিংও জরুরি, যাতে তাঁরা মানবিকতা ও সহানুভূতির গুরুত্ব বুঝতে পারে।

পুলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে এবং ভিডিও সংগ্রহ করে তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে। এই ঘটনায় কল্যাণী জুড়ে নেমে এসেছে নিন্দার ঝড়। সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রতিবাদের বার্তা ছড়াচ্ছেন হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে—#JusticeForStrayDog, #StopAnimalCruelty। পশুপ্রেমীরা চান, এই ঘটনার যেন শীঘ্রই সুষ্ঠু তদন্ত হয় ও অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা হয়, যাতে প্রাণীদের উপর এই ধরনের বর্বরতা আর না ঘটে।