অল্পের জন্য রক্ষা পেল আপ বনগাঁ লোকাল (Bongaon Local)। প্রাণ বাঁচলো কয়েকশো নিত্য যাত্রীর। সোমবার সন্ধেবেলা হঠাৎই স্থানীয় বাসিন্দারা লক্ষ্য করেন বারাসাত স্টেশনের আগে রেল লাইনে সাজানো রয়েছে সারি সারি পাথর। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারাই লোকো মোটর পাইলটকে খবর দেন। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি লাইনের উপর থেকে পাথর সরানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে দুষ্কৃতী নয় এই কাজ করেছে কিছু স্থানীয় মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল বলেন, “আমরা রেললাইনের কাছে এসে দেখি অনেকগুলো পাথর সারি করে রাখা। ট্রেনটা আসার শব্দ পেয়ে আমরা দৌড়ে গিয়ে লোকো পাইলটকে জানাই। তিনি তৎক্ষণাৎ ট্রেন থামিয়ে দেন। না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।” আরেক বাসিন্দা শ্যামলী দাসের দাবি, “এটা কোনো স্থানীয় লোকের কাজ বলেই মনে হয়। কারণ এত রাতে এমন জায়গায় পাথর কে রাখবে? এর পিছনে কোনো উদ্দেশ্য থাকতেও পারে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বারাসাত-বনগাঁ রেলপথে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এই রুটে লোকাল ট্রেনগুলি সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই রেললাইনে পাথর রাখার মতো ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। অতীতেও বনগাঁ-শিয়ালদা শাখায় চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে, যাতে যাত্রীরা আহত হয়েছেন।
আরো দেখুন পিএনবি কেলেঙ্কারি মামলায় সিবিআই চার্জশিটে নীরব মোদীর বোন পূর্ণিমা অভিযুক্ত
রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা পাথরগুলো পরীক্ষা করছি এবং এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। এটি দুর্ঘটনার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে কিনা, তা তদন্তের পরই স্পষ্ট হবে।” তিনি আরও বলেন, “স্থানীয়দের সতর্কতার জন্যই আজ বড় বিপদ এড়ানো গেছে। তবে এর পিছনে কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করা হবে।” রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) এবং স্থানীয় থানার পুলিশও এই তদন্তে সহযোগিতা করছে।
এই ঘটনা রেল কর্তৃপক্ষের নজরদারির দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। বারাসাতের মতো ব্যস্ত স্টেশনের কাছাকাছি এমন ঘটনা ঘটায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন নিয়মিত যাত্রী, সুব্রত হালদার বলেন, “রেললাইনে এভাবে পাথর রাখা থাকলে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে? রেলের আরও কড়া নজরদারি দরকার।” অনেকে দাবি করেছেন, রাতের বেলায় রেলপথে পেট্রোলিং বাড়ানো উচিত এবং সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেললাইনে পাথর রাখা শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়ায় না, এটি নাশকতার ইঙ্গিতও দিতে পারে। রেলের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা জানান, “এ ধরনের ঘটনা সাধারণত দুর্বৃত্তদের কাজ হতে পারে। তবে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনা রোধে রেলপথে নিয়মিত পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি।”
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। অনেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “স্থানীয়দের জন্যই আজ শত শত যাত্রী বেঁচে গেছে। কিন্তু রেল কী করছে?” আপাতত, রেল পুলিশের তদন্তের উপরই নির্ভর করছে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন। স্থানীয়রা আশা করছেন, দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।