রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (Amader Para Amader Samadhan) আরও বেশি কার্যকর করতে এবার সক্রিয় হল নবান্ন। মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ (Manoj Panth)। ওই বৈঠকেই তিনি কর্মসূচির সফল রূপায়ণের লক্ষ্যে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনকে।
রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, প্রচারে কোনওরকম খামতি রাখা যাবে না। কর্মসূচির সময় ও স্থান সম্পর্কে এলাকার সাধারণ মানুষকে স্পষ্ট ও আগাম বার্তা দিতে হবে। মুখ্যসচিব জানান, “মানুষকে জানতে হবে কোথায়, কবে, কখন শিবির বসছে। যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী এসে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন।”
শুধু প্রচার নয়, শিবির চলাকালীন পদস্থ আধিকারিকদের শারীরিক উপস্থিতিও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশ, প্রতিটি ক্যাম্পে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে—প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যাচাই, আবেদন গ্রহণ ও পরিষেবা প্রদানে যেন কোনওরকম জট না হয়।
অন্তর্ভুক্ত ৩৭টি সরকারি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে:
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার
বার্ধক্যভাতা
স্বাস্থ্যসাথী
কৃষক বন্ধু
খাদ্য সাথী
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড
এই কর্মসূচির প্রতিটি বুথের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যজুড়ে ৬৩২টি শিবির আয়োজিত হয়েছে। দুর্দান্ত জনসংযোগের হাতিয়ার হিসাবে এই প্রকল্পকে সামনে রেখেই রাজ্যজুড়ে এগিয়ে চলেছে প্রশাসন।
এই বৈঠকেরই আর এক গুরুত্বপর্ণ দিক ছিল রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি। আগামী বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজ্যের একাধিক জেলায় চলছে প্লাবন। সেই প্রসঙ্গে জেলাশাসকদের মুখ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন, প্লাবিত এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়াতে হবে।
ত্রাণ সামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রাখতে হবে এবং বিলি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে হবে। ঘাটালের মতো দুর্গম এলাকাতেও দ্রুত পৌঁছনোর জন্য বিকল্প রাস্তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যান আরামবাগ, খানাকুল ও ঘাটালের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে। সঙ্গে ছিলেন মনোজ পন্থও। তারা বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিস্থিতির প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে নেন।
নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগেই প্রতিটি জেলাকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নজর দিতে হবে যাতে কোনও এলাকাবাসী প্রয়োজনীয় সাহায্য থেকে বঞ্চিত না হন।
রাজ্য সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ একদিকে যেমন সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়, তেমনি বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের সক্রিয়তা তুলে ধরছে। ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ এখন শুধু একটি প্রকল্প নয়, হয়ে উঠছে জনসংযোগের সেতুবন্ধন।