‘সরকার না সুদের কারবারি?’, ডিএ ইস্যুতে সুপ্রিম পর্যবেক্ষণে চাঞ্চল্য

মহার্ঘ ভাতা পাওয়া যাবে কি যাবেনা তাই নিয়ে চলছে চাপানউতোর (Supreme Court)। বহু বছর ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরকারী কর্মচারীদের মামলা চলছে। এখন সেই মামলার…

Supreme Court new observation

মহার্ঘ ভাতা পাওয়া যাবে কি যাবেনা তাই নিয়ে চলছে চাপানউতোর (Supreme Court)। বহু বছর ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরকারী কর্মচারীদের মামলা চলছে। এখন সেই মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে চলতে থাকা ডিএ মামলার শুনানি এবং সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ বুধবার রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে।

বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্য শুনে আদালত কক্ষে শুরু হয়েছিল কানাকানি। তিনি দাবি করেন, দিল্লির বঙ্গভবন এবং চেন্নাইয়ের ইউথ হস্টেলে রাজ্য সরকারের কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বাংলায় কর্মরত একই কর্মীরা রোপা (রিভাইজড পে অ্যান্ড অ্যালাউন্স) নিয়মে কম ডিএ পাচ্ছেন।

   

এই বৈষম্যের অভিযোগ তুলে তিনি সরকারি নথি ও উদাহরণ উপস্থাপন করেন। তাঁর বক্তব্যের পর বিচারপতি মিশ্রের একটি চাঞ্চল্যকর পর্যবেক্ষণ আদালতের আলোচনাকে নতুন মোড় দেয়। তিনি বলেন, “এরা পুরোনো দিনের সুদের কারবারিদের মতো টাকা বাঁচিয়ে অন্য কাজে লাগাচ্ছে।”

গোপাল সুব্রহ্মণ্যম তাঁর সওয়ালে বলেন, “দিল্লির বঙ্গভবনে কর্মরত রাজ্য সরকারের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাচ্ছেন, যা অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের ভিত্তিতে ২০০৮ সাল থেকে প্রযোজ্য।

সরকারি নথিতেই এই তথ্য রয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার দাবি করছে, তারা জানে না কীভাবে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া যায়। এটা সঠিক নয়।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি দিল্লি ও চেন্নাইয়ে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া সম্ভব, তাহলে বাংলায় কেন নয়? এটি কি ইনসিডেন্টাল ডিসক্রিমিনেশন নয়?” তিনি আরও বলেন, “ডিএ হলো ভ্যারিয়েবল অ্যালাউন্স, যা কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য।”

বিচারপতি মিশ্র এই বক্তব্যের পর রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, বঙ্গভবনের কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার জন্য কি আলাদা আদেশনামা জারি করা হয়েছিল? গোপাল সুব্রহ্মণ্যম জানান, “২০১৯ সালের রোপা নিয়মের পর ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে বঙ্গভবনের কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ ও এইচআরএ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু পরবর্তী দুই বছর তাঁদের ডিএ দেওয়া হয়নি। এরপর সামান্য কিছু দেওয়া হয়।” তিনি আরও জানান, এই মামলা ২০১৬ সালে শুরু হয়েছিল, এবং ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট প্রথম রায় দিয়েছিল।আইনজীবীদের বক্তব্যে উঠে আসে যে, কেন্দ্র সরকার প্রতি বছর দু’বার ডিএ প্রদান করে, যা আইন মেনে করা হয়। ডিএ কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য এবং বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

Advertisements

রোপা নিয়মেও বলা আছে, রাজ্য সরকারের কর্মীরা সময়ে সময়ে ডিএ পাওয়ার জন্য যোগ্য। গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “ডিএ কোনও গ্রেস নয়, এটি কর্মীদের অধিকার। সরকার বেতন কমিশনের সুপারিশ মানতে পারে বা নাও পারে, কিন্তু ডিএ দেওয়া তাদের বাধ্যবাধকতা।”এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেও এই মামলার শুনানিতে বঙ্গভবনের কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছিল।

মামলাকারীদের আইনজীবীরা বারবার রাজ্য সরকারের এই বৈষম্যমূলক নীতির সমালোচনা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানিতে বিচারপতি মিশ্রের ‘সুদের কারবারি’র তুলনা রাজ্য সরকারের জন্য বিব্রতকর হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই মন্তব্যে রাজ্য সরকারের আর্থিক নীতি এবং কর্মীদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এই মামলা রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিফলন।

বাংলার সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, তাঁদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হোক। এই মামলার রায় রাজ্যের হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শুনানির পরবর্তী ধাপে কী হয়, তা নিয়ে সবার নজর এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকে। আপাতত কিছুক্ষণের বিরতির পর শুনানি ফের শুরু হবে।

এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিজেপি, এই মামলাকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। তাঁরা দাবি করছেন, তৃণমূল সরকার কর্মীদের প্রতি উদাসীন এবং তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

গোলপার্থক্যের লড়াইয়ে নামধারীর বিরুদ্ধে ‘অল-ইন’ মেজাজে ইস্টবেঙ্গল, একাদশে কারা?

অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এই মামলার মাধ্যমে বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। আগামী দিনে এই মামলার রায় কী দিকে যায়, তা রাজ্যের রাজনীতি ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।