রাজ্য সরকার এবার সরাসরি চাষিদের (Farmers) কাছ থেকে আলু কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপে চাষিরা আর বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়বেন না। কৃষি বিপণন দপ্তর সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে জানানো হয়েছে ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলার চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনা শুরু হবে।
সরকার এই উদ্যোগের মাধ্যমে চাষিদের জন্য একটি ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চাইছে। প্রতি কুইন্টাল আলুর দাম চাষিদের কাছে ৯০০ টাকা দেওয়া হবে, অর্থাৎ এক কেজি আলু ৯ টাকায় কেনা হবে। এই ব্যবস্থার ফলে রাজ্যের আলু চাষিরা সঠিক মূল্য পাবেন এবং বাজারের ওঠানামায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে এবার প্রায় ১৪০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে।
এছাড়াও, সরকার হিমঘর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আলু কেনার ব্যবস্থা করবে। হিমঘরের মালিকরা চাইলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন আলু কেনার জন্য। কৃষি বিপণন দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একজন চাষির থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ কুইন্টাল (প্রায় ৭০ বস্তা) আলু কেনা হবে। রাজ্য সরকার মোট ১১ লক্ষ মেট্রিক টন আলু কিনবে, যা বিভিন্ন জেলার চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
এবার এই ব্যবস্থাটি ১২টি জেলা থেকে চালু হবে, যেখানে আলু কিনে নেওয়া হবে। ওই জেলার মধ্যে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর। জেলা অনুযায়ী, বিডিওরা হিমঘর ভিত্তিক আলু কেনার তালিকা তৈরি করবেন। যেসব চাষি আলু বিক্রি করবেন, তাদের কিছু প্রমাণপত্র যেমন কৃষক বন্ধু প্রকল্প, কিষান ক্রেডিট কার্ড, জমির নথি এবং বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রয়োজন।
এছাড়া, চাষিরা আলু বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট বিডিওর কাছে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্রে চাষিদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নথি জমা দিতে হবে। রাজ্য সরকার এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সমবায় ব্যাঙ্ক বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে হিমঘর মালিকদের ঋণ প্রদানেরও ব্যবস্থা করেছে। হিমঘর মালিকরা এই ঋণ ব্যবহার করে আলু কেনার কাজ শুরু করবেন।
চাষিদের কাছে আলু কেনার কাজ শুরু হবে ১ মার্চ থেকে। আর ৭ জুন থেকে হিমঘর কর্তৃপক্ষ এই কেনা আলু বিক্রি করা শুরু করবেন। প্রতিটি হিমঘর কর্তৃপক্ষকে আলু বিক্রির জন্য প্রতি সপ্তাহে মোট মজুত আলুর ৫ শতাংশ বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি কুইন্টাল আলুর বন্ডের দাম ১০৬২ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তবে, যদি বাজারে আলুর দাম কমে যায়, তবে সরকার হিমঘর মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেবে। কৃষি বিপণন দপ্তর বন্ডের দাম মনিটর করবে এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে চাষিদের জন্য একটি সুরক্ষিত বিক্রয় ব্যবস্থা তৈরি হবে। তাছাড়া, বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হবে, যাতে আলু চাষিরা আর কোনো দুরবস্থার শিকার না হন। এর ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু সহজেই বিক্রি করতে পারবেন এবং সরকারও তাদের উৎপাদন সংগ্রহ করতে পারবে।
রাজ্য সরকার চাষিদের (Farmers) স্বার্থ সুরক্ষিত করতে এবং তাদের ক্ষতি রোধ করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষি দপ্তরের এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য কৃষিপণ্যেও চালু করা হতে পারে।