পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বারবার এই বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লির দরবারে গিয়েছে। রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের শীর্ষনেতারা বারবার দাবি করে আসছিলেন যে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে তার প্রাপ্য বরাদ্দ অর্থ দেয়নি, যা রাজ্যের উন্নয়ন এবং বিশেষত গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবশেষে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক খবর এল। সংসদে গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার বিশেষত ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) ক্ষেত্রে অর্থের অভাবে নানা সমস্যার মুখে পড়েছে। এই বকেয়া অর্থ পরিশোধ না হওয়ার কারণে রাজ্যের গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে গেছে। ফলে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়েছে এবং পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলের অভাব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এবার, সংসদীয় কমিটি জানায় যে ১০০ দিনের কাজের পাশাপাশি অন্য সকল বকেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধ করা উচিত। তবে, কিছু অর্থবর্ষ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেই জন্য সেই বছরগুলির অর্থ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কিছু সময়সীমা থাকতে পারে। কিন্তু যেসব অর্থবর্ষের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়নি, তা অবিলম্বে পরিশোধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের সদস্যরা আগেই একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দিয়েছিলেন, যাতে তারা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দাবি করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গকে তার প্রাপ্য বরাদ্দ অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া অর্থ না দেওয়ার কারণে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনটি আরও দাবি করে যে, এর ফলে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে এবং রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি আরও সংকুচিত হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে সংসদীয় কমিটি, এবং তার ভিত্তিতে তারা রাজ্যকে দ্রুত বকেয়া অর্থ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তবে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এই সুপারিশ মেনে কী পদক্ষেপ নেয়। গত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার বঞ্চনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে, রাজ্য সরকার যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রতিবেদন জমা দেয়, তাহলে অর্থ বরাদ্দে কোনও বাধা থাকবে না।
এখন প্রশ্ন হল, কেন্দ্র কী এই সুপারিশ গ্রহণ করবে, না কি এর বিরোধিতা করবে? কারণ, ইতিপূর্বে কেন্দ্র সরকার বহুবার রাজ্যের অভিযোগ অগ্রাহ্য করেছে এবং বকেয়া অর্থের বিষয়ে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে। তাই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর কেন্দ্র ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে এবং রাজ্যের বকেয়া অর্থ দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এই প্রক্রিয়া যদি সফল হয়, তবে তা রাজ্যের গ্রামীণ উন্নয়ন এবং স্থানীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আশা করা যাচ্ছে, এই পদক্ষেপে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাবে, যা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।