স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Scam) মামলায় বড়ঞার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার পর এবার তাঁর কাউন্সিলর পিসি (প্রাইভেট কাউন্সিলর) মায়া সাহার উপর নজর পড়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। মায়া সাহা বীরভূমের সাঁইথিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসি।
তাঁকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামীকাল, ২৮ আগস্ট, কলকাতায় ইডির দফতরে তলব করা হয়েছে। এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক মহলে নতুন করে ঝড় তুলেছে, কারণ এই মামলায় ইতিমধ্যে জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট ইডি মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে। এই অভিযানের সময় তিনি বাড়ির দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করেন এবং প্রমাণ নষ্ট করতে তাঁর দুটি মোবাইল ফোন নিকটবর্তী নর্দমায় ফেলে দেন।
তবে, ইডি কর্মকর্তারা ফোন দুটি উদ্ধার করে এবং তাঁকে গ্রেফতার করে কলকাতার বাঁকশাল আদালতে হাজির করেন, যেখানে তাঁকে ছয় দিনের ইডি হেফাজতে পাঠানো হয়। জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১৬ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় আটজন প্রার্থীর কাছ থেকে ৪৬ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে ২৬ লক্ষ টাকা তাঁর স্ত্রী তোগর সাহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
ইডি এই মামলায় অর্থের উৎস এবং লেনদেনের হদিস পেতে তদন্ত জোরদার করেছে। জীবনকৃষ্ণের শ্বশুরবাড়ি রঘুনাথগঞ্জে এবং তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির উপরও তল্লাশি চালানো হয়েছে। এছাড়া, মায়া সাহার বীরভূমের সাঁইথিয়ার বাড়িতেও ইডি অভিযান চালিয়েছে।
মায়া সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অর্থ লেনদেনে তাঁর ভূমিকা ছিল। ইডি সূত্রে জানা গেছে, মায়া সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে, যাতে তিনি এই দুর্নীতির নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য দিতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলা গত তিন বছর ধরে রাজ্যের রাজনীতিতে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট ২০২৫ সালের এপ্রিলে ২৫,০০০-এর বেশি শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই মামলার দুর্নীতির দিক তদন্ত করছে, আর ইডি অর্থ লেনদেনের হদিস খুঁজছে।
ভাষার রাজনীতি: কি বলছে বাম-শিবির?
মায়া সাহার বাড়িতে ইডি অভিযানের সময় তিনি জানিয়েছেন, তিনি তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন এবং ২৮ আগস্ট ইডির দফতরে হাজির হবেন। ইডি সূত্রে জানা গেছে, মায়া সাহার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং সম্পত্তির নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারণ তিনি জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকতে পারেন। এই মামলায় ইডি এখনও বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, যার মধ্যে প্রসন্ন রায় নামে একজন মধ্যস্থতাকারীও রয়েছেন।