ইডির নিয়োগ দুর্নীতি (SSC scam) মামলায় একের পর এক নতুন ঘটনা সামনে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি, ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) কর্তৃক প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার পর অর্পিতা মুখোপাধ্যায় একটি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে পাওয়া টাকা কোথা থেকে এসেছিল?’’ আদালতে দাঁড়িয়ে অর্পিতার আইনজীবী বলেছেন, ‘‘আমার মক্কেলের বাড়ি থেকে পাওয়া টাকা কে এনেছিল? তদন্তে দেখানো হয়নি, কোথা থেকে সেই নগদ টাকা এসেছিল!’’ এই প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানে মৃত্যু ২৬/১১ হামলার মূলচক্রী মাক্কির, কী হয়েছিল হাফিজ-ভগ্নিপতির?
প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম আগে থেকেই উঠে এসেছে। ইডি এবং সিবিআই এই মামলার তদন্তে যে তথ্য পেয়েছে, তা রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে শোরগোল সৃষ্টি করেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠে, যার মধ্যে চাকরির বদলে টাকা নেওয়া, বেআইনিভাবে সরকারি দপ্তরের পদ দখল করা এবং সেই সম্পর্কিত টাকার লেনদেনের অভিযোগ ছিল। তার বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও তদন্তের পেশে রয়েছেন।
গত বছর, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। তার পর থেকেই তদন্তের সঙ্গে জড়িত সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে। অর্পিতা এবং পার্থের বিরুদ্ধে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তবে দু’জনেই এ বিষয়ে অস্বীকার করে আসছেন। এবার অর্পিতার আইনি প্রশ্ন সেই দুর্নীতির নেপথ্যের আসল উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
চিনা মাদকে আমেরিকায় রোজ মৃত্যু ২০০ জনের, ‘মাদকে’ ছারখার মার্কিনিরা
কলকাতার বিচার ভবনে বর্তমানে ৫৪ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তবে, ১১ জন অভিযুক্ত ইডির মামলায় অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে, অর্পিতাও এই মামলায় অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির প্রমাণ সঠিক নয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনোরকম ষড়যন্ত্র চলছে।
এমন অবস্থায়, পুরো মামলার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইডি এই মামলার প্রতিটি কোণায় ঢুঁ মেরে তদন্ত চালাচ্ছে। তবে, অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে তৎপর, আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অভিযোগ তুলছে। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এই ধরনের মামলা রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে, যখন রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে।
গোয়েন্দা সাহায্যে দল গড়ছে ইউনূস, জামাতমদতপুষ্ঠ সরকারকে কড়া আক্রমণ বিএনপির
এদিকে, আদালতে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে যখন এই ধরনের আবেদন উঠছে, তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিচারব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনগুলি এই ধরনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
এখন দেখার বিষয় হবে, আদালত কিভাবে এই মামলাগুলোর ওপর সিদ্ধান্ত নেয় এবং তদন্তের গতিপথ কীভাবে এগোয়। সন্দেহের ভাঁজ আরও গভীর হচ্ছে, কারণ প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতির টাকা আসলে কোথা থেকে এসেছে, এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল।