নয়াদিল্লি: এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়াতে বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। একজনও দাগি কে যোগ্য তালিকায় স্থান দেওয়া যাবে না এমনটাই রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সম্প্রতি যোগ্য তালিকায় একজন দাগি প্রার্থীকে বিশেষভাবে সক্ষম বলে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে স্থান দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয় সুপ্রিমকোর্টে। এসএসসি এই মামলার জবাব দিতে গিয়ে যুক্তি খাড়া করেছিল যে দাগি প্রার্থী বিশেষ ভাবে সক্ষম এবং তাকে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে রাখা হোক।
কিন্তু আজ আদালতে সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ পরিষ্কার জানিয়েছে যে ধরণেরই হোক দাগি তালিকায় নাম থাকা কোনও চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। এসএসসি ভেবেছিল দাগি প্রার্থীদের বিশেষভাবে সক্ষম প্রমান করিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া যাবে কিন্তু আজ শীর্ষ আদালতের রায়ে এসএসসির সেই আশা বিশ বাওঁ জলে। এছাড়াও আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছিল এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ইস্যু শুনবে কলকাতা হাইকোর্ট।
মমতার নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ আন্তর্জাতিক পর্যটনের মানচিত্রের শীর্ষে
এই মামলার শুনানি ২৮ তারিখ। আজ শীর্ষ আদালত স্পষ্টতই এসএসসিকে ভর্ৎসনা করে এবং বলে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এই জটিলতা তৈরী করেছে এসএসসি। আদালত আরও বলেছে যে ২০১৬ সালের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সেই সময় মিটিয়ে নেওয়া যেত। তখন কেন দাগি তালিকা দেওয়া হয়নি। সর্বোপরি নতুন চাকরি প্রার্থীরা ১০০ ভাগ নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউ তে ডাক পাননি এর দায় সম্পূর্ণ এসএসসির এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।
এই মামলার মূলে রয়েছে ২০১৬ সালের বিখ্যাত নিয়োগ কেলেঙ্কারি, যা ‘ক্যাশ-ফর-জবস’ স্ক্যাম নামে কুখ্যাত। তখন এসএসসি নয়-দশম ও উচ্চমাধ্যমিক ক্লাসের শিক্ষক ও অশিক্ষক পদে প্রায় ২৬ হাজার নিয়োগ করে। কিন্তু ওএমআর শীটের ম্যানিপুলেশন, র্যাঙ্ক জাম্পিং, অযোগ্য প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্তি এসব অসংখ্য অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে। সিবিআই তদন্তে প্রমাণিত হয় যে ১,৪৯৮ জন অফ-প্যানেল প্রার্থী অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, ৯২৬ জন র্যাঙ্ক জাম্প করে এগিয়েছিলেন, আর ৪,০৯১ জনের ওএমআর মিলছিল না।
ফলে কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৪-এ পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে, আর সুপ্রিম কোর্ট এবছর এপ্রিলে সেই রায় কায়েম করে। দাগি প্রার্থীদের চাকরি ছিন্ন করে, বেতনসহ সব ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়—১২ শতাংশ সুদসহ।কিন্তু সমস্যা এখানেই শেষ নয়। নতুন নিয়োগ চক্রে (২০২৫-এর সিলেকশন টেস্ট) এসএসসি আবার একই ভুল পুনরাবৃত্তি করেছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারভিউ তালিকায় ১,৮০৪ জন দাগি প্রার্থীর নাম দেখা গেছে, যাদের নাম আগের তালিকায় ছিল।
এমনকি একজন প্রার্থী, যিনি আগে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন, এবার পিএইচ (পার্সন উইথ ডিসএবিলিটি) কোটায় ইন্টারভিউ কল পেয়েছেন। এসএসসি যুক্তি দিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘স্পেশালি অ্যাবলড’ প্রার্থীদের ছাড় আছে, কিন্তু সার্টিফিকেট যাচাইয়ে দেখা যাবে। কিন্তু এই যুক্তি আদালতে গিয়ে ধসে পড়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সঞ্জয় কুমার বেঞ্চ (সিজেআই সঞ্জীব খান্না ও জাস্টিস সঞ্জয় কুমার) স্পষ্ট করে বলেছে, “ধরণ যাই হোক, দাগি তালিকায় নাম থাকলে কোনও চাকরির প্রার্থীকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যাবে না।” এসএসসির যুক্তি—যে দাগি প্রার্থীরা ‘বিশেষভাবে সক্ষম’ বলে প্রমাণ করে চাকরি পেতে পারেন—এটাকে আদালত সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
