এসএসসি (SSC) পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে গত কয়েক বছর ধরে যে জটিলতা এবং অভিযোগ উঠে আসছিল, তা এখন আরও বেশি গুরুতর হয়ে উঠেছে। একদিকে যেখানে ২৬ হাজার শিক্ষক প্রার্থী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়, অন্যদিকে সেই আন্দোলনরত শিক্ষকরা এই মুহূর্তে প্রশ্ন তুলছেন, আদৌ কি সঠিকভাবে যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব হবে? নাকি ২০১৭ সালের পুরো প্যানেলটাই বাতিল করতে হবে, সেই সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সবাই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুলের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রশান্ত দাসও ছিলেন এই আন্দোলনে যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই নিয়োগ নিয়ে সংগঠিত আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলেন। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে, পরবর্তী শুনানির আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে, তাঁর চাকরি থাকবে কিনা, তা আর জানা গেল না। তাঁর এই অকাল মৃত্যু আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজের জন্য এক গভীর শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসএসসি নিয়োগের এই অনিয়মের পেছনে যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তা বার বার উঠে এসেছে। একাধিক অভিযোগ রয়েছে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে বহু যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন, আবার অনেক অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই আন্দোলন শাসক দলের বিরুদ্ধে এক কঠোর সমালোচনার রূপ নিয়েছে, যেখানে শিক্ষকদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ২০১৭ সালে যে প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল, তার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সেই প্যানেলটি আদৌ বৈধ কি না। সরকার এবং এসএসসি-র উপর চাপ বেড়েই চলেছে, কারণ শিক্ষক নিয়োগে অস্থিরতা এবং আইনগত জটিলতা শিক্ষক সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো সুরাহা পাওয়া উচিত।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মূল দাবি হল—যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগের সঠিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং যোগ্যদের চাকরি দেওয়া। অন্যদিকে, অযোগ্যদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি, একেবারে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি উঠেছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া আসেনি, যা আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজের মধ্যে আরও হতাশা সৃষ্টি করেছে।
এমন অবস্থায়, যেমন দুঃখজনকভাবে প্রশান্ত দাসের মৃত্যু ঘটেছে, তেমনি এই আন্দোলনের মধ্যে আরও অনেক শিক্ষকের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাঁদের জন্য শীঘ্রই কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে, শিক্ষক সমাজ আশা করছে যে, সরকার তাদের সমস্যার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে একটি স্থিতিশীল সমাধান বের করবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিশ্চয়তা আর না থাকে।