কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে এসএসসি-নিয়োগ বাতিল হওয়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার মুখে কিছুটা হাসি ফিরলেও, পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তাঁরা। আদালতের রায়ে আপাতত যাঁরা ‘দাগি’ বা ‘অযোগ্য’ নন, তাঁরা স্কুলে যেতে পারবেন, বেতনও পাবেন— এ কথা বলা হলেও, এই চাকরি যে সাময়িক, সেটাও পরিষ্কার। আর এখানেই খচখচে আপত্তি তাঁদের।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন—“ছ’মাসের জন্য নয়, আমরা চাই সসম্মানে অবসর পর্যন্ত শিক্ষকতা করতে। এই পেশাকে ছোট করে ‘আস্থাভাজন’ নয়, স্থায়ী সমাধান চাই।”
‘স্বস্তির মাঝেও অস্বস্তি’ আন্দোলনকারীদের সুরে SSC Job loss teachers reaction
আন্দোলনরত সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল সুপ্রিম কোর্টে রায় শোনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এই রায় আমাদের রাস্তায় থাকতে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, কিন্তু মূল সমস্যা থেকে গিয়েছে। আমরা চাই আদালতের কাছে পুনর্বিবেচনার সুযোগ, যাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই পেশায় থাকতে পারি।”
চিন্ময়বাবুর মতে, এটি কৌশলগত জয়ের মতো— শিক্ষকরা আপাতত স্কুলে ফিরে যেতে পারবেন, বেতন পাবেন। কিন্তু, এ যেন এক প্রকার ‘প্যারোল’-এর মতোই, যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!
চাকরির মেয়াদে ঘোর আপত্তি SSC Job loss teachers reaction
সংগঠনের কোর কমিটির সদস্য আবদুল্লা আল মঞ্জুম বলেন, “ছ’মাসের চাকরি তো কথা নয়! আমরা কোনও নতুন পরীক্ষা দেব না। আমাদের যে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়নি, তা সবাই জানে। এখন আবার পরীক্ষার নামে অসম্মান কেন?” তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “আন্দোলন চলবেই, রাস্তায় থেকে চলবে।”
সাময়িক রায়, স্থায়ী সমাধান নয় SSC Job loss teachers reaction
ডিআই অফিসের সামনে আন্দোলনের সময় কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের লাথির শিকার হওয়া শিক্ষক অমিত ভুঁইয়া বলছেন, “এই রায় একরকম স্বস্তি। অন্তত স্কুলে ফিরতে পারব। কিন্তু এটা কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্ট জানাক, আমাদের চাকরি ফের ২২ এপ্রিলের আগের মতোই থাকবে।”
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল, এসএসসির ২০১৬ সালের প্যানেলকে পুরোপুরি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ২৫,৭০০ জনের চাকরি খারিজ হয়ে যায়। রাজ্যের দাবি— এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার জগতে বড় ভাঙন দেখা দিতে চলেছে, কারণ বহু স্কুলে শিক্ষকই থাকবে না।
এই প্রেক্ষিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আদালতে আর্জি জানায়— যাঁরা ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগি’ নন, তাঁরা যেন অন্তত স্কুলে যেতে পারেন। সেই আর্জিতেই কিছুটা সাড়া দিয়ে আদালত নির্দেশ দেয়,৩১ মে-র মধ্যে রাজ্য ও এসএসসিকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। তবে স্পষ্ট বলা হয়েছে— এই সময়সীমা মানা না-হলে, আপাতত চাকরিতে থাকা এই শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নির্দেশ বদলে যেতে পারে।
প্রশ্নটা শুধু একটা চাকরি ফিরে পাওয়ার নয়— প্রশ্নটা শিক্ষকতা নামক মহান পেশার মর্যাদা রক্ষার। আন্দোলনরতদের মতে, তাঁরা ‘পার্ট-টাইম’ শিক্ষক হতে চান না, বরং স্থায়ী শিক্ষক হয়ে ৬০ বছর পর্যন্ত পড়াতে চান মাথা উঁচু করে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে আলো দেখছেন তাঁরা, সেটাকে এখনও ‘সূর্যোদয়’ ভাবতে রাজি নন— এই লড়াইয়ের চূড়ান্ত জয় না-আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, রাস্তাতেই।
West Bengal: Supreme Court grants temporary relief for SSC-recruited teachers in West Bengal, allowing non-tainted educators to continue. Protests demand permanent job security. Legal battle continues over fair employment rights.