পূর্ব ভারতের রেল (Railway) পরিষেবায় ইতিহাস রচনা হতে চলেছে আগামী ১০ আগস্ট। সেদিন থেকে শিয়ালদহ–রানাঘাট শাখায় চালু হচ্ছে পূর্ব ভারতের প্রথম এসি লোকাল ট্রেন। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের প্রস্তুতি চলছিল, অবশেষে যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে এই আধুনিক লোকাল ট্রেন পরিষেবা। রেল দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের আরাম, সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে একাধিক নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা এই ট্রেনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে একটি এসি লোকাল ট্রেন চালু হবে। এই ট্রেন সোম থেকে শনি, সপ্তাহে ছ’দিন চলবে। রানাঘাট স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছবে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। অপরদিকে শিয়ালদহ থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে রওনা হয়ে রানাঘাট পৌঁছবে রাত ৮টা ৩২ মিনিটে।
এই ট্রেন ‘গ্যালোপিন’ লোকাল হিসেবে চলবে। অর্থাৎ সমস্ত স্টেশনে থামবে না। রানাঘাট থেকে ছাড়ার পর এটি থামবে চাকদহ, কল্যাণী, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, ব্যারাকপুর, খড়দহ, সোদপুর, দমদম ও বিধাননগর স্টেশনে।
ট্রেনের প্রতিটি কামরায় ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক এয়ার কন্ডিশনার বসানো হয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ‘টক-ব্যাক’ সিস্টেম, যার মাধ্যমে যাত্রীরা কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে সরাসরি চালক বা গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ট্রেনে ১২টি কামরা থাকবে, যাতে পর্যাপ্ত আসন ও দাঁড়ানোর জায়গা রয়েছে। ট্রেনের পরিকাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে গ্রীষ্ম বা বর্ষা—যে কোনও মৌসুমে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
রেল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, বিনা টিকিটে এই ট্রেনে কেউ যাত্রা করতে পারবেন না। প্রতিটি কামরায় টিকিট পরীক্ষক (টিটি) ও রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ) জওয়ান থাকবেন। বিনা টিকিট যাত্রী ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিয়ালদহ ডিভিশনের পার্সোনাল অফিসার একলব্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই এসি লোকাল ট্রেন যাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও আরামদায়ক যাত্রার অভিজ্ঞতা এনে দেবে। প্রযুক্তিগত সব দিক থেকেই ট্রেনটি প্রস্তুত।”
এই এসি লোকাল ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১০ আগস্ট, সোমবার। পরের দিন অর্থাৎ ১১ আগস্ট থেকে সাধারণ যাত্রীরা নিয়মিত ভ্রমণের জন্য এই ট্রেন ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে দুটি এসি লোকাল ট্রেন রেলের কাছে রয়েছে, তবে প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র একটি ট্রেন চালানো হবে। যাত্রী চাহিদা ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এই পরিষেবা ঘিরে ইতিমধ্যেই যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। বহু নিয়মিত যাত্রী জানিয়েছেন, গরমের দিনে বা দীর্ঘ যাত্রায় এই এসি লোকাল তাদের জন্য আরামদায়ক ও সময় সাশ্রয়ী হবে। রানাঘাট লোকোশেডে ট্রেন পরিদর্শনে গিয়ে রেল আধিকারিকরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
পূর্ব রেলের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র আধুনিক রেল পরিষেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, একই সঙ্গে শহরতলির রেলযাত্রায় নতুন যুগের সূচনা করবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাত্রী সুরক্ষা, প্রযুক্তি ও আরামের সমন্বয়ে এই এসি লোকাল পূর্ব ভারতের রেল ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।