HomeWest BengalSouth Bengalপরকীয়া সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু, গ্রেফতার ৫

পরকীয়া সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু, গ্রেফতার ৫

মিলন পণ্ডা, দিঘা: পরকীয়া সম্পর্কের (Extramarital affair) জেরে ভয়ঙ্কর মর্মান্তিক পরিণতি। গণপিটুনিতে মৃত্যু হল তাপস মাইতি নামে এক যুবকের (২৯)। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ভোররাতে দিঘা থানার মেদিনীপুর (পশ্চিম বুথ) এলাকায়। ঘটনার পরই উত্তেজনা ছড়ায় দিঘা থানা এলাকায়। মৃত যুবকের গ্রামবাসীরা দিঘা থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে তারা রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত করেন। অবশেষে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

Advertisements

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত পাঁচজন হল জগদীশপুর গ্রামের সুষমা শ্যামল, তার স্বামী আনন্দ শ্যামল, পায়া মেদিনীপুরের সৌরভ পাত্র, পল্লব প্রধান এবং লক্ষ্মীকান্ত পাত্র। মঙ্গলবার সকল অভিযুক্তকে কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক সুষমা শ্যামল এবং সৌরভ পাত্রকে পুলিশি হেফাজত এবং বাকি তিনজনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

   

স্থানীয় সূত্রের খবর, বিবাহিত সুষমা শ্যামলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন তাপস মাইতি। ব্যাঙ্গালোরে কাজ করলেও তিনি নিয়মিত গ্রামে ফিরতেন এবং ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতেন। পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁকে হাতেনাতে ধরার জন্য পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

সোমবার ভোররাতে পদিমা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ের পাশে যুবককে বাইক থেকে নামতে দেখেন সুষমার পরিবারের সদস্যরা। সাথে সাথেই তারা ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তের মধ্যে জনতা জড়ো হয়ে তাপসকে ধরে বেধড়ক মারধর শুরু করে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে দিঘা রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তড়িঘড়ি কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাপসের।

খবর পেয়ে তাপসের বাবা তপন মাইতি হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। তাঁর অভিযোগ—একদল মানুষ পরিকল্পিতভাবে তাপসকে আক্রমণ করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, “চোর বলে চেঁচিয়ে জনতার রোষ বাড়ানো হয়েছিল। আসলে পরকীয়া সম্পর্কের বদলা নিয়েই ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে।”

Advertisements

দিঘা থানার ওসি অমিত প্রামানিক বলেন, “মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনসহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পদিমা–২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুশান্ত পাত্র বলেন, “তাপস আমাদের গ্রামেই থাকত। সে চোর নয়। মোটরবাইক নিয়ে কেউ চুরি করতে যায়? এটা স্পষ্টই পরিকল্পিত হামলা। চোর চোর চিৎকার করে জনরোষ বাড়িয়ে তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

ঘটনার পর সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত দিঘা থানার সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হন গ্রামবাসীরা। পুলিশ গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরে অবরোধ তুলে নেন। সুষমা শ্যামল তার স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই সম্পর্কই নাকি এলাকায় চর্চার বিষয় ছিল। সেই প্রণয়েই কি মৃত্যু? নাকি অন্য কিছু তদন্তে তা পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments