নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ফের ক্ষোভে ফেটে পড়লেন টোটো চালকরা। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম জেলা টোটো চালক সংগঠনের উদ্যোগে রাস্তায় নামলেন শতাধিক চালক। তাঁদের একটাই দাবি টোটোর ওপর চাপানো অন্যায় ট্যাক্স ও ইন্সুরেন্স ফি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
চালকদের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন ব্লক ও শহর এলাকায় টোটো রেজিস্ট্রেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাসিক ভিত্তিতেও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ টোটো চালকই দরিদ্র পরিবারের মানুষ। তাঁরা দিনভর টোটো চালিয়ে সংসার চালান। এমন অবস্থায় নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় তাঁদের পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব নয়।
একজন টোটো চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রতিদিন খেটে যে সামান্য আয় করি, তা দিয়েই বাড়ি চালাতে হয়। অথচ প্রশাসনের লোকেরা রেজিস্ট্রেশন বা ইন্সুরেন্সের নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। এটা একেবারে অন্যায়।”
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সংগঠনের এক প্রতিনিধি দল ঝাড়গ্রামের জেলা শাসকের দফতরে ডেপুটেশন জমা দেন। সংগঠনের পক্ষে বলা হয়েছে, তাঁদের তিনটি মূল দাবি রয়েছে, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা হোক। ট্যাক্স ও ইন্সুরেন্সের নামে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হোক। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সংগঠনের এক নেতা বলেন, “বহু টোটো চালক ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছেন। মাসের শেষে ব্যাংকের কিস্তি দিতে হয়। তার সঙ্গে এই অতিরিক্ত খরচ আমাদের দম বন্ধ করে দিচ্ছে।”
বিক্ষোভ চলাকালীন শহরের বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়। জেলা শাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রায় শতাধিক সদস্য। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে যে, চালকদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। জেলা শাসকের দফতর সূত্রে খবর, ডেপুটেশন গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই টোটো চালকদের মধ্যে এই অসন্তোষ বাড়ছিল। অনেকেই বলছেন, প্রশাসনের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যক্তি টোটো রেজিস্ট্রেশনের নামে বাড়তি অর্থ নিচ্ছেন, যা আইন বিরুদ্ধ। এই ইস্যুতে এবার একজোট হয়ে আন্দোলনে নামলেন চালকরা।
বিক্ষোভ শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি শীঘ্রই তাঁদের দাবি পূরণ না হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে অবস্থান বিক্ষোভ বা রাস্তায় টোটো নামানো বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচি নেওয়া হবে ঝাড়গ্রামের মতো এলাকায় টোটো শুধুমাত্র পরিবহণের মাধ্যম নয়, বহু পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। তাই তাঁদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে সামাজিক প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে, স্থানীয় মানুষও টোটো চালকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, টোটো শহর ও গ্রামাঞ্চলের সংযোগ রক্ষা করে। চালকদের বঞ্চিত করলে সাধারণ মানুষও সমস্যায় পড়বেন।



