নদিয়া: কৃষ্ণনগরে এক ব্লক লেভেল অফিসারের (বিএলও) আত্মহত্যার ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত। নির্বাচন কমিশনের উপর ‘অমানবিক কাজের চাপের’ অভিযোগ তুলে বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয় শহরজুড়ে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) এবং তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। তাঁরা অভিযোগ তোলেন যে, বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় বিএলওদের ওপর চাপ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে, যার দুঃখজনক উদাহরণ রিণু তরফদারের মৃত্যু।
শহরের প্রধান প্রধান রাস্তায় স্লোগান দিতে দিতে তৃণমূল কর্মীরা জেলা প্রশাসনিক দফতরের সামনে জড়ো হন। কর্মীদের দাবি, এসআইআর-এর লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে তাঁরা দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগছেন। ৫২ বছর বয়সি রিণু তরফদারের মৃত্যুর পিছনেও এই চাপই মূল কারণ বলে দাবি করেন তাঁরা।
রিণু দেবীর পরিবার জানায়, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজের অতিরিক্ত দায়িত্ব, দীর্ঘক্ষণ মাঠে ঘোরাফেরা, ফোনে বারবার কাজের তাড়া এবং অসম্ভব সময়সীমা মেনে চলতে গিয়ে তিনি মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, “কাজ না হলে বকুনি, কাজ বাড়লে চাপ সব মিলিয়ে তিনি কষ্টে ভেঙে পড়েছিলেন।”
মিছিলে উপস্থিত মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “একজন সরকারি কর্মীর মৃত্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হাজার হাজার বিএলওকে আজ এমন চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে যা মানবিকতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন এমন একটি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে মানবিকতার কোনও স্থান নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যারা ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন, তাঁদের নিরাপত্তা, মানসিক অবস্থা বা আর্থিক স্থিতি কিছুই কমিশন ভাবছে না। রিণু তরফদারের মৃত্যু এর নির্মম উদাহরণ।” তাঁর বক্তব্যে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
সায়নী ঘোষ বলেন, “বছরের পর বছর ধরে বিএলওরা অভিযোগ করে আসছেন যে কাজের চাপ বাড়ছে, কিন্তু কমিশন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই এসআইআর কালে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা সহ্য করা অসম্ভব। অবিলম্বে কাজের চাপ কমাতে হবে এবং মানসিক সহায়তা দিতে হবে।”
তৃণমূলের প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসনের হাতে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়, যেখানে তিনটি মূল দাবি রাখা হয় বিএলওদের কাজের চাপ কমানো, মানসিক পরামর্শদানের ব্যবস্থা, রিণু তরফদারের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বনগাঁর সভায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি দাবি করেন, “অমানবিক কাজের চাপে তিনজন বিএলও মারা গেছেন এবং অন্তত ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি।”
যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগগুলির কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। তবু এই ঘটনার পর সারা রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া, বিএলওদের কাজের পদ্ধতি এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
