তৃণমূলের বড় ভাঙন! একাধিক নেতা–পরিবারের বিজেপিতে যোগ

tmc-leaders-join-bjp-purba-medinipur-defection-ahead-of-assembly-polls

বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্যে রাজনৈতিক দলবদলের ঝড় ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক জেলা পূর্ব মেদিনীপুর আবারও সেই নাটকীয়তার কেন্দ্রে। পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) বড় ভাঙন দেখা দিল। প্রাক্তন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁদের পরিবারসহ একাধিক নেতা–কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন।

Advertisements

এই যোগদান পর্ব অনুষ্ঠিত হয় সোমবার সন্ধ্যায় কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির পার্টি অফিসে। উপস্থিত ছিলেন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ও শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সোমনাথ রায়, দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক অরূপ কুমার দাস এবং অন্যান্য জেলা নেতৃত্ব।

   

যোগদানকারীদের হাতে পদ্ম পতাকা তুলে দেন সৌমেন্দু অধিকারী নিজেই। এই ঘটনা সামনে আসতেই পটাশপুর কেন্দ্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে।

🔶 কারা যোগ দিলেন বিজেপিতে?

এই দলবদলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম—

  • নীলমাধব দাস অধিকারী, পঁচেট অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি

  • প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য

  • তাঁদের পরিবার

  • এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় কর্মী–সমর্থক

গ্রামস্তরে প্রভাবশালী এই নেতৃত্বের যোগদান বিজেপির কাছে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

🔶 যোগদানকারীদের দাবি: “দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে নষ্ট হয়েছে তৃণমূল”

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নীলমাধব দাস অধিকারী বলেন—

“আমরা জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল করতাম। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতি, চাকরি চুরি ও সন্ত্রাসে দূষিত। পটাশপুরের মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই BJP-তেই ভবিষ্যৎ দেখছি।”

তাঁর বক্তব্য স্থানীয় মানুষের মনে শাসক দলের প্রতি ক্ষোভ আরও স্পষ্ট করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যোগদানকারী অন্য কর্মীরা দাবি করেছেন—

  • স্থানীয় স্তরে উন্নয়ন থমকে গেছে

  • সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না

  • গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক হিংসা বেড়েছে

এই অবস্থায় তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়াকেই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন।

🔶 বিজেপির দাবি: “তৃণমূলের অপশাসন শেষের পথে”

বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী বলেন—

“তৃণমূলের অপশাসন অন্তিম লগ্নে পৌঁছে গেছে। ২৬ সালের ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবি নিশ্চিত। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা মুক্তি চাইছেন, তাই তাঁরা দলে দলে বিজেপিতে আসছেন।”

তিনি আরও বলেন—

“এই দলবদল শুরু মাত্র। বিধানসভার আগে এখনও অনেক সিনেমা বাকি।”

Advertisements

অর্থাৎ, আগামী মাসগুলিতে তৃণমূল থেকে আরও বড় দলবদলের ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

🔶 তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া: “এরা বহুদিন নিষ্ক্রিয় ছিল”

এই যোগদানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন—

“যারা যোগ দিয়েছে তারা বহুদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল। ২৪ সালে BJP-র হয়ে ভোট করিয়েছিল। আজ শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিল।”

তৃণমূলের বক্তব্য অনুযায়ী, এদের দল ছাড়ায় সংগঠনে কোনো প্রভাব পড়বে না।

তবে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা আলাদা—

তৃণমূল প্রকাশ্যে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও, পটাশপুরের মতো তৃণমূল-শক্ত ঘাঁটিতে বারবার দলবদল দলটির জন্য উদ্বেগের কারণ।

🔶 বিধানসভার আগে ‘ট্রেলার’—সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত

পূর্ব মেদিনীপুর ঐতিহাসিকভাবে শুভেন্দু অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্র। ২০২১ সালের ভোটের সময় এখানেই বিজেপি উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল।

এবার আবারও সেই অঞ্চলে দলবদল শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন করে গরম হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষকদের মতে—

  • তৃণমূলের গ্রামস্তরের ভাঙন

  • BJP-র আগ্রাসী সংগঠন কৌশল

  • স্থানীয় অসন্তোষ

সব মিলিয়ে পটাশপুর ভবিষ্যৎ নির্বাচনে হাই-ইনটেনসিটি কনটেস্টিং সিট হয়ে উঠতে পারে।

🔶 সামগ্রিক মূল্যায়ন

বিধানসভার মাত্র কয়েক মাস আগে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের এই ভাঙন BJP-র মনোবল বাড়িয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও, স্থানীয় পর্যায়ে এই দলবদল নির্বাচনী মেরুকরণকে আরও তীব্র করবে বলেই রাজনৈতিক মহলের অনুমান।

আগামী দিনে এই এলাকায় আরও দলবদল হলে নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতির চিত্র বদলে যেতে পারে—এমনই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।