শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: ঘাটালের মোহনপুরে রীতিমতো উত্তেজনা। পরিবারের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। তৃণমূল কংগ্রেসের এক বুথ সভাপতির (TMC leader) বিরুদ্ধে উঠেছে নিজের ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রীর উপর নৃশংস মারধরের অভিযোগ। অভিযুক্তের নাম সুশান্ত ভট্টাচার্য, তিনি মোহনপুর অঞ্চলের কুসমান উত্তর বুথের সভাপতি।
অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই মৃত বাবা-মায়ের সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করেই সুশান্ত ভট্টাচার্য নিয়মিতভাবে নিজের ছোট ভাই সৌমিত্র ভট্টাচার্য এবং ভাইয়ের স্ত্রী দেবী ভট্টাচার্য-এর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে আসছেন।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সুশান্ত এবং তার স্ত্রী উমা ভট্টাচার্য নিয়মিতভাবে তাঁদের ভয় দেখান, শাসকদলের প্রভাব খাটান এবং গালিগালাজ করেন। অতীতে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১৯ অক্টোবর ঘটনার মোড় আরও ভয়াবহ হয়। একটি পাওয়ার টিলার রাখা নিয়ে বচসার জেরে অভিযুক্ত সুশান্ত ভট্টাচার্য নাকি নিজের ভাই ও বৌমাকে নির্মমভাবে মারধর করেন। মারধরে গুরুতর জখম হন সৌমিত্র ও দেবী ভট্টাচার্য। মুখ থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করলে তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর ওই দম্পতি ঘাটাল থানায় গিয়ে অভিযুক্ত সুশান্ত ভট্টাচার্যের নামে একটি জিডি দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, সুশান্ত নিজেকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন — “আমি পার্টির নেতা, আমার কিছুই হবে না।”
অভিযোগ শুধুমাত্র ভাই ও বৌমার সীমায় আটকে নেই। পরিবারের অন্য সদস্যরাও দাবি করেছেন, সুশান্ত ভট্টাচার্য তাঁর দিদিদের উপরও একইভাবে অত্যাচার চালান। বড় দাদা সুজিত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “আমরা বারবার ওকে বুঝিয়েছি, কিন্তু শোনে না। পার্টির ভয়ে সবাই চুপ থাকে।”
ঘটনার পর যখন সংবাদমাধ্যম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, দেখা যায় অভিযুক্তের বাড়িতে তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানান, সাংবাদিকরা আসার খবর পেয়ে সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী উমা ভট্টাচার্য এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, স্থানীয় প্রশাসন এবং শাসক দলের ব্লক ও জেলা নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। পুলিশ শুধুই “দেখছি” বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
ঘটনাটি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, “শাসক দলের প্রভাবশালী নেতারা এখন নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও, ভয় দেখাচ্ছেন।”
এলাকাবাসীর দাবি, অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


