শীত পড়তেই পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ সুন্দরবনে

Bangla Pokkho

সুন্দরবন: শীত পড়তেই সুন্দরবনে (Sundarban) পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। নদীর ধারে পিকনিক, জঙ্গল সাফারি, লঞ্চ ভ্রমণ সব মিলিয়ে পরিবেশ থাকে উৎসবমুখর। ঠিক সেই সময়ই সাময়িক বিরতি নিচ্ছে সুন্দরবন পর্যটন। আগামী ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দুই দিন সুন্দরবনের জঙ্গল ও জলপথ বন্ধ থাকবে পর্যটকদের জন্য। কারণ, এই সময় শুরু হচ্ছে বাঘশুমারি ২০২৫, যা সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক অভিযান।

Advertisements

রাজ্য বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ওই দু’দিন কোনও পর্যটক, লঞ্চ, হাউসবোট, ক্রুজ বা প্রাইভেট নৌকা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না। সকল অনলাইন বুকিংও ইতিমধ্যেই বাতিল ও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বনদফতরের বক্তব্য, বাঘের সঠিক গণনা ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য জঙ্গলকে সম্পূর্ণ শব্দহীন ও পর্যটকমুক্ত রাখা জরুরি।

   

বাঘশুমারির সময় বাঘের গতিবিধি, খাদ্য সংগ্রহ, প্রজনন আচরণ ও বনাঞ্চলে তাদের বিচরণপথ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যটকদের উপস্থিতি, নৌকার শব্দ বা মানুষের গতিবিধি বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে সমীক্ষার রিপোর্ট ভুল হতে পারে। তাই নির্ভুল তথ্য পেতে পরিবেশকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অবস্থায় রাখাই লক্ষ্য।

সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিনস বলেন, “বাঘ গণনা কোনও সাধারণ সমীক্ষা নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত ও বিজ্ঞাননির্ভর প্রক্রিয়া। আমাদের মাঠকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমবার এত বৃহৎ পরিসরে মনিটরিং করা হবে। আশা করছি এবার বাঘের সংখ্যায় ইতিবাচক চিত্র উঠে আসবে।”

বাঘ গণনার জন্য এবার রেকর্ড সংখ্যক ১৪৮৪টি ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো হবে, যা সুন্দরবনের প্রায় ৪১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাবে। ক্যামেরাগুলি একাধিক কোণ থেকে বাঘের ছবি তুলবে। প্রতিটি ছবিতে ডোরাকাটা দাগের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে আলাদা আলাদা বাঘ শনাক্ত করা হবে, কারণ প্রতিটি বাঘের শরীরের দাগ মানুষের আঙুলের ছাপের মতোই ইউনিক।

Advertisements

এবার শুমারিতে শুধুমাত্র বাঘের সংখ্যা নয়, নজর রাখা হবে তাদের খাদ্যশৃঙ্খলের উপরও। অর্থাৎ বাঘের প্রধান শিকার প্রাণী হরিণ, চিতল, বন্য শুকর, বানর, কাঁকড়া, বন্য ছাগল প্রভৃতির উপস্থিতি ও সংখ্যার ভারসাম্যও সমীক্ষা করা হবে। বনদফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বাঘ বাড়লে তার খাদ্যও পর্যাপ্ত থাকতে হবে। তাই খাদ্যচক্র, ইকো ব্যালেন্স ও বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য সবকিছুই বিশ্লেষণ করা হবে।”

এবারের শুমারির অন্যতম বিশেষ দিক হল, প্রথমবার ব্যবহার করা হবে একটি ডিজিটাল মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রত্যন্ত বনাঞ্চলে থাকা বনকর্মীরা রোজের তথ্য, GPS লোকেশন, বাঘ বা অন্যান্য প্রাণীর চিহ্ন, ছবি, পায়ের ছাপ, ক্যামেরা ট্র্যাপের ডেটা সবকিছু সরাসরি পাঠিয়ে দেবেন কেন্দ্রীয় সার্ভারে। ফলে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজ হবে দ্রুত, নির্ভুল এবং স্বচ্ছ।

বনদফতরের মতে, বাঘশুমারি শুধু গণনার জন্য নয়, এটি সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ সংরক্ষণ পরিকল্পনার ভিত্তি। এই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে আগামীতে বন সুরক্ষা, নদী প্রতিবেশ, খাদ্য সংস্থান, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ, টহল ব্যবস্থা ও চোরা শিকার প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণ করা হবে।