শিয়ালদহ ডিভিশনে ফের ট্রেন বাতিল ও সময় বদল

কলকাতা: ফের ট্রেন বিপর্যয়ের মুখে শিয়ালদহ (Sealdah) শাখার নিত্যযাত্রীরা। হাওড়া ডিভিশনের ব্যস্ত লাইনে বেশ কিছুদিন ধরে ট্রেন বাতিল ও পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার জেরে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। এবার একই পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে শিয়ালদহ ডিভিশনেও।

Advertisements

পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে যে, শিয়ালদহ ও বিধাননগর স্টেশনের মাঝের অংশে জরুরি সিগন্যালিং আপগ্রেডেশন, ট্র্যাক সংলগ্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্রাফিক-পাওয়ার ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ করা হবে।

   

এই কাজের জন্য ১১ নভেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২ নভেম্বর ভোর ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট লাইনে পাওয়ার ব্লক কার্যকর থাকবে। যার ফলে ওই সময়ে ট্রেন চলাচল আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

রেলের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১১ নভেম্বর রাতে শিয়ালদহ–ডানকুনি ও শিয়ালদহ–নৈহাটি রুটের একাধিক লোকাল সম্পূর্ণ বাতিল থাকবে। বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে ৩২২৪৯ শিয়ালদহ–ডানকুনি লোকাল, ৩২২৫২ ডানকুনি–শিয়ালদহ লোকাল, ৩১৪৪৭ শিয়ালদহ–নৈহাটি লোকাল এবং ৩১৪৫০ নৈহাটি–শিয়ালদহ লোকাল।

এর পাশাপাশি কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ আংশিকভাবে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যেমন, ৩১৫৪২ শান্তিপুর–শিয়ালদহ লোকাল আর শিয়ালদহ পর্যন্ত যাবে না, এটি ব্যারাকপুর স্টেশনেই থামবে এবং যাত্রা সমাপ্ত করবে। একইভাবে ১২ নভেম্বর ৩১৫১১ শিয়ালদহ–শান্তিপুর লোকালটি শিয়ালদহ থেকে না ছেড়ে ব্যারাকপুর স্টেশন থেকেই পরিষেবা শুরু করবে বলে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ১২ নভেম্বর শিয়ালদহ–লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেন ৫৩১৭১ নির্ধারিত সময়ের তুলনায় ৩০ মিনিট দেরিতে যাত্রা করবে। ট্রেনটি ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ছাড়বে বলে বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। রেলের এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে শিয়ালদহ ডিভিশনের লক্ষাধিক নিত্যযাত্রীর দৈনন্দিন যাতায়াতে সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Advertisements

যাত্রীদের একাংশ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বারবার পরিষেবা বন্ধ রাখা হলেও বিকল্প ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রাখা হয় না। স্টেশনগুলিতে সঠিক ঘোষণা, বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা কিংবা সময় ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচারেও কিছুটা ঘাটতি থেকে যায় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

শিয়ালদহ স্টেশন, যা শহরতলির অন্যতম ব্যস্ত রেলস্টেশন, সেখান থেকে প্রতিদিন উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি সহ বিভিন্ন জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। ফলে রাতের দিকে ট্রেন বন্ধ থাকলে কর্মরত মানুষ, পড়ুয়া এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয় বেশি।

রেলের তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, এই কাজগুলি যাত্রী সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের ট্রেন চলাচল ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতেই করা হচ্ছে। পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানান, “রাতে পাওয়ার ব্লক করেই বেশিরভাগ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয় যাতে দিনের ব্যস্ত সময়ে পরিষেবায় কম প্রভাব পড়ে। যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত, তবে এই কাজগুলি সুনিশ্চিত ও উন্নত পরিষেবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।” তবে যাত্রীরা বলছেন, পরিকল্পনা আরও সংগঠিত হলে দুর্ভোগ অনেকটাই কমানো সম্ভব।

শুধু শিয়ালদহ ডিভিশনই নয়, আসানসোল ডিভিশনেও এই মাসে ট্রেন পরিষেবায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। বর্ধমান–দুর্গাপুর–আসানসোল রুটে ইন্টারলকিং ব্যবস্থা সংস্কার ও টেকনিক্যাল আপগ্রেডেশনের কাজ চলায় ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রেনের সময় ও রুটে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। যার প্রভাব দূরপাল্লার পাশাপাশি বহু লোকাল ট্রেনের সময়সূচিতেও পড়বে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল।

রেলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে, যাত্রা শুরুর আগে এনটিইএস অ্যাপ, পূর্ব রেলের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া বা স্টেশন ঘোষণা থেকে ট্রেন সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য জেনে নিতে। প্রয়োজনে যাত্রার জন্য অতিরিক্ত সময় হাতে রাখতে বলা হয়েছে, যাতে দুর্ভোগ এড়ানো যায়। শিয়ালদহ শাখার এই ট্রেন বাতিলের খবর ইতিমধ্যেই নিত্যযাত্রী মহলে আলোচনার কেন্দ্রে। এখন দেখার, পরিষেবা স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগে এবং রেল যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থাপনায় কতটা সক্রিয় ভূমিকা নেয়।