ঝাড়গ্রাম: সাঁকরাইলের ধানঘোরী বাজারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেখা দিল এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। হঠাৎই তিনটি বাঁদর (Monkey attack) বাজারের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করায় বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। প্রতিদিনের মতো সকালবেলা বাজারে ভিড় ছিল যথেষ্ট। ঠিক সেই সময়ই এই তাণ্ডবের কারণে সাধারণ মানুষ থেকে দোকানদার সবাই চরম সমস্যায় পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, তিনটি বাঁদরের মধ্যে একটি বিশেষভাবে হিংস্র হয়ে ওঠে। সেটি কখনো চলন্ত মোটরবাইকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, কখনো দোকানে ঢুকে খাবার ছিনিয়ে নিচ্ছিল। বাজারের মিষ্টির দোকান, সব্জির দোকান এবং ফলের দোকানের সামনে বাঁদরগুলোর দৌরাত্ম্য আরও বেশি ছিল। একাধিক দোকানদার অভিযোগ করেছেন, বাঁদরগুলো আচমকাই দোকানের জিনিসপত্র এলোমেলো করে দেয় এবং খাবার নিয়ে পালিয়ে যায়।
এই তাণ্ডবের জেরে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাজারের পরিবেশ থমথমে হয়ে ওঠে। বহু দোকানদার ভয়ে শাটার নামিয়ে দেন। যারা খোলা দোকানে ছিলেন, তারাও দ্রুত দোকান ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। পথচারীরাও আতঙ্কে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। বাজারে উপস্থিত কয়েকজন মহিলা জানান, বাঁদরগুলো এতটাই আক্রমণাত্মক ছিল যে রাস্তায় হাঁটা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য রাস্তা ব্যবহার করতে শুরু করেন।
স্থানীয়দের দাবি, বাঁদরগুলোর আচরণ অত্যন্ত অস্বাভাবিক। তারা মনে করছেন, প্রাণীগুলো হয়তো আঘাতপ্রাপ্ত, অথবা খাবারের অভাবে মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। বনাঞ্চল সংকোচন ও মানুষের দখলদারিত্ব বাড়ার ফলে প্রায়ই বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এমনটাই মন্তব্য বাসিন্দাদের একাংশের।
এদিকে, এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। তাদের দাবি, সকাল থেকেই বনদপ্তরে বারবার ফোন করা হলেও কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি। দ্রুত উদ্ধারকারী দল না এলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। ধানঘোরী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য বলেন, “এভাবে দিনের বেলায় বাজারে তাণ্ডব আমি কোনোদিন দেখিনি। যে কোনো সময় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারত। বনদপ্তরকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বনদপ্তরকে দ্রুত হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান। তার কথায়, “এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। বাজারের ভিড়ে বন্য প্রাণীর তাণ্ডব প্রাণহানির কারণ হতে পারে। বনদপ্তরের পদক্ষেপ এখন জরুরি।”
দীর্ঘক্ষণ এই আতঙ্কজনক অবস্থার পর দুপুরের দিকে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে স্থানীয় মানুষদের মনে আতঙ্ক এখনো রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে বনদপ্তরের নিয়মিত নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন সবাই।


