শহিদ বেদী ঘিরে রাজনীতি, শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ স্নেহাশীষের

শান্তনু পান, পূর্ব মেদিনীপুর: নন্দীগ্রামের মাটি শুধুই আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত নয়, এটি রাজ্য রাজনীতির অন্যতম বারুদ ঠাসা ময়দানও। ১০ নভেম্বর ছিল নন্দীগ্রামের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসে চিহ্নিত অপারেশন সূর্যোদয়-এর ১৮তম বর্ষ। আর এই দিনেই শহিদের স্মরণকে কেন্দ্র করে আবারও সামনাসামনি তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। শাসক বিরোধী শিবিরের তীব্র আক্রমণ, কথার জবাবে পাল্টা তির, অভিযোগ প্রতিযোগিতায় একসময়কার আন্দোলনের আবেগ যেন ক্রমেই বর্তমান রাজনীতির সংঘাতের আগুনে রূপ নিচ্ছে।

Advertisements

২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর, সোনাচূড়া থেকে মহেশপুর পর্যন্ত ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ডাকা এক বিশাল পদযাত্রায় নেমেছিল নন্দীগ্রামের মানুষ। অভিযোগ ওঠে, সেই মিছিলের উপর সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। গুলিচালনারও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি নথি অনুযায়ী, ওই সংঘর্ষে ২ জন শহিদ হন, এবং আজও ১২ জন নিখোঁজ। সেই দিনটিই ইতিহাসে অপারেশন সূর্যোদয় নামে চিহ্নিত—যা বাংলার রাজনীতিতে আজও এক রক্তাক্ত ক্ষতচিহ্ন।

   

রাজনৈতিক পালাবদলের পর, এই শহিদ দিবস পালন ঘিরে নন্দীগ্রামে বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। আগে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বেই শহিদ স্মরণ কর্মসূচি হতো। কিন্তু তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরই আলাদা ভাবে শহিদ দিবস পালন করে আসছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ গোকুলনগর কর পল্লীর শহিদ বেদীতে উপস্থিত হন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। তবে তার আগেই বিজেপি নেতা কর্মীরা শহিদ বেদীতে মাল্যদান করে যান। এরপর তৃণমূল শিবির ঐ স্থান গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধ করার পর শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী যা নিয়ে শুরু হয় নতুন করে বিতর্ক।

শহিদ বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তীব্র আক্রমণ করেন স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। বলেন, “মানুষের নজর উন্নয়ন থেকে ঘোরাতে শুভেন্দু বিভাজনের রাজনীতি করছেন। যারা নন্দীগ্রামের মানুষকে হত্যা করেছিল, তাঁরাই আজ বিজেপির নেতা! আর তাঁদের সঙ্গেই শহিদদের মালা দিচ্ছেন শুভেন্দু!”

Advertisements

পাশাপাশি ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ কর্মসূচি SIR (Summary Intensive Revision) প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, “SIR এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়তে পারে। মানুষকে পরিকল্পিতভাবে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল তাই এর বিরোধিতা করছে।”

অন্যদিকে, সকালেই শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের মানুষকে দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেননি। ভোট এলেই পরিযায়ী নেতারা শহিদ দিবসে দেখা দেন।”

এই মন্তব্যের পাল্টা জবাবে পরিবহন মন্ত্রী বলেন, “আসল পরিযায়ী তো বিজেপিরাই! ভোট ছাড়া নন্দীগ্রামের মাটিতে তাঁদের দেখা যায় না। আর আমরা আন্দোলনে সরাসরি না থাকলেও আজ মানুষের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করছি।”

শহিদ দিবস ঘিরে উত্তাপ থাকলেও মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে বড় কোনো অশান্তি হয়নি। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনায় স্পষ্ট একদিকে শহিদ স্মরণের আবেগ, অন্যদিকে ক্ষমতা ও কৃতিত্বের দখলদারি নন্দীগ্রাম আজও দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু।