শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: মেদিনীপুরে হঠাৎপল্লীকে কেন্দ্র করে বিতর্ক এখনও তাজা, তার মধ্যেই আরও বড় আলোড়ন তুলেছে খয়রুল্লা উত্তরপাড়ায় নতুন এক বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থী কলোনির হদিস (Bangladeshi refugee colony)। মেদিনীপুর সদর ব্লকের শহর থেকে কিছুটা দূরে এই এলাকায় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে নতুন বসতি, যা এখন প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক মহল সব জায়গাতেই উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু।
স্থানীয়দের দাবি, ২০০৫ সালের পর থেকেই এখানে ক্রমশ বাড়তে থাকে বাংলাদেশ থেকে আসা পরিবারের সংখ্যা। বর্তমানে এই কলোনিতে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার বসবাস করছেন। এদের প্রায় সকলেই দাবি করছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় অত্যাচার, নিরাপত্তাহীনতা এবং জীবনসংশয় থেকে বাঁচতেই তারা পরিবার নিয়ে এদেশে পালিয়ে এসেছেন।
শরণার্থীদের বক্তব্য, তারা বনগাঁ সীমান্ত পার হয়ে দালালের হাত ধরে ভারতে প্রবেশ করেছেন। প্রবেশের বিনিময়ে কেউ দিয়েছেন জনপ্রতি ২ হাজার টাকা, আবার কারোর খরচ হয়েছে পরিবারপিছু ৫ হাজার টাকাও। তাদের কেউই বৈধ কাগজপত্র, ভিসা বা পাসপোর্ট নিয়ে আসেননি। তাই দীর্ঘদিন ধরেই তারা বসবাস করলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্ক দূর হয়নি।
ইতিমধ্যেই খয়রুল্লা কলোনির প্রত্যেক পরিবারের হাতে পৌঁছেছে SIR (Special Identification Report)–এর এনুমারেশন ফর্ম। কিন্তু মূল সংকট তৈরির কারণ কারও নামই নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকায়। CAA প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই তালিকার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় শরণার্থীদের মধ্যে গভীর দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, নথির অভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হতে পারে।
কলোনির বাসিন্দাদের কথায়, “বাংলাদেশে থাকা আর সম্ভব ছিল না। পরিবার নিয়ে প্রাণ হাতে করে এসেছি। এখানে শান্তিতে থাকছি ঠিকই, কিন্তু নাগরিকত্ব না পেলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।”
আরও অনেকে বলেন, “দিনমজুরের কাজ করে কোনওরকমে দিন চলে। কবে নাগরিকত্ব পাব, জানি না। শুধু অপেক্ষা করছি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের জন্য।”
এই পুরো বসতি গড়ে ওঠা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন সমস্ত কিছু জেনেও বহু বছর ধরে এই অবৈধ বসতি বিস্তারকে নীরবভাবে সহ্য করেছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে “এত পরিবার এখানে বসবাস করছে, অথচ প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই কেন? রাজনৈতিক স্বার্থে কি এই কলোনিকে বড় হতে দেওয়া হয়েছে?”
তবে জেলা প্রশাসনের একাংশের দাবি, বসতি ক্রমে বড় হওয়া প্রথমদিকে নজরে পড়েনি। এখন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এদিকে, দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন খয়রুল্লার শরণার্থীরা। CAA কবে পূর্ণমাত্রায় প্রয়োগ হবে, নাগরিকত্ব পেতে কতটা সময় লাগবে, সেসব প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
মেদিনীপুরে বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থী নিয়ে নতুন বিতর্ক এলাকায় উত্তেজনা, আশঙ্কা এবং প্রশাসনিক জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে এখন শ্বাসরুদ্ধ অপেক্ষা খয়রুল্লা উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের।


