তমলুক, ১১ সেপ্টেম্বর: বিধানসভা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ফের প্রকাশ্যে এল বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল। অভিযোগ, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের মন্ডল ৩-এ এক তপশিলি পরিবারের মাইক চালকের নাবালক ছেলেকে মারধর করেছে বিজেপিরই এক গোষ্ঠী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
গোষ্ঠী কোন্দলের শিকড়
নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের এই ৩ নম্বর মন্ডলে সোনাচূড়া, গোকুলনগর, কালীচরণপুর ও ইঞ্চি গ্রাম পঞ্চায়েত অন্তর্ভুক্ত। কিছুদিন আগেই বিজেপি ঘোষণা করে, এই মন্ডলের সভাপতি হচ্ছেন বটকৃষ্ণ দাস। কিন্তু তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে প্রবল গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি জয়দেব দাস ও বটকৃষ্ণ দাস – দু’জনেরই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল। পরে জয়দেব দাস বাস্তবিকই তৃণমূলে যোগ দেন, আর বটকৃষ্ণ দাস বিজেপিতেই থেকে যান। সম্প্রতি আবার জয়দেব পুনরায় বিজেপিতে ফিরেছেন। একসময়ের রাজনৈতিক বন্ধু, এখন তাঁরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
অন্যদিকে, শ্যামাপ্রসাদ মাইতিকে সরিয়ে বটকৃষ্ণকে মন্ডল সভাপতি করার পর থেকেই শুরু হয়েছে আদি-নব্যর সংঘর্ষ। বিজেপির অন্য নেতা ও কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সাহেব দাস এবং সদ্য তৃণমূল থেকে ফের বিজেপিতে ফেরা জয়দেব দাস – এঁদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব বাড়ছে বটকৃষ্ণের।
ঘটনাস্থলে কী ঘটল?
শুক্রবার নন্দীগ্রামের মহেশপুর বাজারে বটকৃষ্ণ দাসের ডাকে একটি প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা আয়োজনের কথা ছিল। বিকেল চারটের সময় পুলিশও সেখানে হাজির হয়। কিন্তু বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে মন্ডল সভাপতি কর্মসূচি বাতিল করেন।
কর্মসূচি বাতিলের পর মঞ্চে বাঁধা মাইক খুলে নিচ্ছিলেন স্থানীয় এক মাইক চালকের নাবালক ছেলে। সেই সময় অভিযোগ ওঠে, সাহেব দাস ও জয়দেব দাসের নেতৃত্বে থাকা বিজেপির গোষ্ঠী হঠাৎ ছেলেটির উপর চড়াও হয়। তাঁরা কেন মাইক খোলা হচ্ছে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং মাইক চালকের ছেলেকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে সেই মাইক জোর করে আবার বাঁধিয়ে সভা করেন সাহেব দাস ও তাঁর গোষ্ঠীর নেতারা।
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে অভিযোগ তোলেন— বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে তপশিলি পরিবারের নাবালক ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মন্ডল সভাপতির নির্দেশে কেন মাইক খোলা হচ্ছে এই অজুহাতে একটি তপশিলি পরিবারের ছেলেকে মারধর করেছে বিজেপির একাংশ।”
বিজেপির বক্তব্য
অন্যদিকে বিজেপির সাহেব দাস সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “আজকের এই প্রতিবাদ সভা তাঁদের বিরুদ্ধে, যারা তলায় তলায় তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং করে চলছেন।” তিনি দাবি করেন, বিজেপির ভেতরে গোষ্ঠী কোন্দলের তত্ত্ব কৃত্রিমভাবে খাড়া করছে তৃণমূল, যাতে সংগঠন দুর্বল হয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ
রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু অধিকারীর নিজের কেন্দ্র নন্দীগ্রামে বিজেপির ভেতরের এই কোন্দল দলের জন্য অস্বস্তিকর। বিশেষ করে ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে এই ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব বিরোধীদের হাতকে শক্তিশালী করতে পারে। তপশিলি পরিবারের নাবালককে মারধরের অভিযোগ ইতিমধ্যেই বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
সব মিলিয়ে, নন্দীগ্রামে বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব শুধু সংগঠনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং সাধারণ মানুষের জীবনেও প্রভাব ফেলছে। আগামী দিনে এই কোন্দল কতটা গভীর হবে, তার উত্তর দেবে সময়।