বহরমপুর: মুর্শিদাবাদের বহরমপুর (Murshidabad explosive) মহকুমায় ঠিক এক সপ্তাহ আগেই দিল্লিতে হওয়া বিস্ফোরণের অনুরণন মিলিয়ে না যেতেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়াল রানিনগর গ্রামে। সোমবার ভোররাতে হঠাৎই তড়িঘড়ি অভিযান চালায় বহরমপুর থানার পুলিশ। লক্ষ্য সাইদুল শেখের বাড়ি। গ্রামবাসীরা জানান, মাঝরাতেই পুলিশি জিপ ঢুকে পড়ে সরু গলিপথে। পরে জানা যায়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সইদুলের বাড়িতে বিস্ফোরক মজুত থাকার সন্দেহেই এই অভিযান।
পুলিশের দাবি, বাড়ির একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ২ কেজি অ্যান্টিমনি ট্রাইসালফাইড, যা সাধারণত বোমা তৈরির অন্যতম প্রধান রাসায়নিক উপাদান। উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক বিভাগে। পুলিশ আরও জানায়, অভিযানের খবর পেয়ে সাইদুল, তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।
সংক্রান্তি থেকেই বাড়বে তাপমাত্রা, আপাতত শীত নেই বাংলায়
পুলিশ সূত্রে খবর, সইদুল শেখের নামে ইতিমধ্যেই NDPS আইন, বিস্ফোরক পদার্থ আইন এবং অন্যান্য ফৌজদারি ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, সইদুলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল যে তিনি বেআইনি বোমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। এর আগের একাধিক বোমা-ফাটার ঘটনার সঙ্গেও তাঁর যোগ থাকার সন্দেহ ছিল পুলিশের। তবে সেই মামলাগুলির বেশিরভাগেই তিনি জামিনে ছিলেন।
এই ঘটনার পরই গোটা এলাকায় চড়ছে উত্তেজনার পারদ। বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশকর্মী, যাতে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি, উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দফতরকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাদের টিম এসে ঘটনাস্থলের চারপাশ পরীক্ষা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করে।
তবে গ্রামের একাংশের দাবি “সইদুলকে ফাঁসানো হচ্ছে।” প্রতিবেশীরা বলেন, “ওর বিরুদ্ধে আগে কিছু অভিযোগ থাকলেও, সাম্প্রতিককালে সে ঠিকঠাক কাজ করছিল। কাউকে কোনও ক্ষতি করত না। হঠাৎ করে তার বাড়িতে বিস্ফোরক পাওয়া গেল এটা মানা যাচ্ছে না। পুলিশই রেখে দিয়ে তাকে ফাঁসাচ্ছে হতে পারে।” যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে।
স্থানীয় এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, “সাইদুলের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বোমা বাঁধার মামলা রয়েছে। এলাকায় গোপন সূত্রে খবর মিলেছিল, সে আবার বিস্ফোরক মজুত করতে শুরু করেছে। তাই অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার হওয়া অ্যান্টিমনি ট্রাইসালফাইড কোনও সাধারণ বস্তু নয়। স্পষ্টভাবে বিস্ফোরক তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।”
এদিকে, দিল্লি বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিশেষ সতর্কতা নির্দেশ জারি হয়েছে। তার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে রাজ্য পুলিশ সদর দফতর। সূত্র জানিয়েছে, সইদুলের সঙ্গে রাজ্যের অন্য কোনও বিস্ফোরক চক্রের সম্পর্ক আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গ্রামবাসী, রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মনে এখন বড় প্রশ্ন এটা কি শুধু একটি পৃথক অপরাধমূলক ঘটনা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনও নেটওয়ার্ক কাজ করছে? পুলিশ আপাতত কোনও মন্তব্য না করলেও, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন যে সইদুল এবং তার সহচরদের খোঁজে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চলবে।
মুর্শিদাবাদের মতো শান্তধর্মী এলাকায় এমন বিস্ফোরক উদ্ধার নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের অনেকেই বলছেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি। বাড়ির পাশেই যদি কেউ বিস্ফোরক বানায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?” পুলিশ আশ্বস্ত করেছে—এলাকায় টহল বাড়ানো হবে এবং খুব দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।


