মুর্শিদাবাদে ৭ দিনে উদ্ধার ১০০০ সকেট বোমা, দুষ্কৃতিদমনে গ্রেফতার ২০

Murshidabad bomb recovery

মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলাজুড়ে বোমাবাজি ও দুষ্কৃতিমূলক কার্যকলাপ রুখতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তৎপরতা গত এক সপ্তাহে নজিরবিহীন ফল এনে দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে টানা অভিযানে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১০০০ সকেট বোমা, এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জন দাগী দুষ্কৃতিকে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এই বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে মুর্শিদাবাদের দীর্ঘদিনের বোমাবাজির প্রবণতা দমন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

Advertisements

মুর্শিদাবাদের পুরনো সমস্যা—বোমাবাজির ‘কালচার’

প্রশাসনের মতে, মুর্শিদাবাদে বোমাবাজির ইতিহাস কয়েক দশক পুরনো। রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, তুচ্ছ বিবাদ—বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বোমা ব্যবহার এই জেলায় বহু বছর ধরেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই পুলিশের কাছে ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই বোমা-সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে জেলা পুলিশ গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র, নজরদারি ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করছে।

   

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “মুর্শিদাবাদে বোমাবাজি নতুন সমস্যা নয়। কিন্তু এই সমস্যার শেকড় উপড়ে ফেলতেই আমরা এবার অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করেছি। লক্ষ্য—একেবারে উৎস থেকে বোমা-সহ দুষ্কৃতিমূলক কার্যকলাপ দমন।”

ড্রোন, স্নিফার ডগ ও মেটাল ডিটেক্টর—অভিযানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার

বোমা উদ্ধারের ক্ষেত্রে পুলিশের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব ছিল সঠিক স্থানে সঠিকভাবে পৌঁছানো। তাই গোটা অভিযানে ব্যবহার হয়েছে—

ড্রোন ক্যামেরা,

স্নিফার ডগ,

মেটাল ডিটেক্টর,

এবং বিশেষ বোম্ব-ডিসপোজাল ইউনিটের তৎপরতা।

ড্রোনের মাধ্যমে বহু এলাকা আকাশপথে স্ক্যান করা হয়, যেসব জায়গা সাধারণত মানুষের চোখের আড়ালে থাকে—সেসব স্থানে লুকিয়ে রাখা বোমার সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়েছে। স্নিফার ডগদের ব্যবহারে মাটির নিচে বা জঙ্গলের মধ্যে রাখা বহু বিস্ফোরকও উদ্ধার হয়।

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, শুধুমাত্র গত ৭ দিনেই বিভিন্ন ব্লক, গ্রাম এবং পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ সকেট বোমা, যা বড় ধরনের অশান্তি ঘটানোর সম্ভাবনা ছিল।

বিশেষ হেল্পলাইন—জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

এই অভিযানের সাফল্যে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছিল অন্যতম। জেলা পুলিশের তরফে বিশেষ একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছিল, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি নাম-পরিচয় গোপন রেখে বোমা বা দুষ্কৃতিমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারছিলেন।

Advertisements

এই হেল্পলাইনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আসে, যা পুলিশকে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। প্রশাসনের মতে, “নাগরিকদের সাহায্য না থাকলে এত বড় সাফল্য সম্ভব হতো না।”

জেলা পুলিশ আরও জানিয়েছে, হেল্পলাইনে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আগামী দিনেও আরও অভিযান চালানো হবে।

৭ দিনে গ্রেফতার ২০—যাদের অধিকাংশই দাগী দুষ্কৃতি

অভিযানে উদ্ধার হওয়া বোমার পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছে ২০ জন সন্দেহভাজন দুষ্কৃতি। এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে পূর্বেও বোমাবাজি, হামলা বা দুষ্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।

জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে বোমাগুলো কোথা থেকে এসেছে, কারা এগুলো তৈরি করছিল এবং মূল চক্রের মাথা কারা। পুলিশের মতে, এই গ্রেফতারি বড় চক্র ভাঙার প্রথম ধাপ।

পুলিশের বার্তা—অভিযান চলবে লাগাতার

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিশিয়াল বার্তায় বলা হয়েছে, “এই অভিযান একবারের নয়। জেলার শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে বোমা উদ্ধারের কাজ অবিরত চলবে। দুষ্কৃতিকারীদের জন্য কোনও ছাড় নেই।”

অভিযানের সাফল্যের পরে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের মনোবল আরও বেড়েছে। বিভিন্ন জেলায় বর্ধিত নজরদারি, হঠাৎ রেইড, কমিউনিটি পুলিশিং—এই সমস্ত ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

চূড়ান্ত লক্ষ্য—মুর্শিদাবাদকে বিস্ফোরকমুক্ত জেলা করা

প্রশাসনের লক্ষ্য শুধুমাত্র বোমা উদ্ধার নয়, বরং এই ‘কালচার’ পুরোপুরি নির্মূল করা। দীর্ঘদিন ধরে যে আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অস্থিরতা বোমাবাজিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল—তা থেকে মুক্ত করাই পুলিশের প্রধান উদ্দেশ্য।

পুলিশের ভাষায়, “মুর্শিদাবাদকে বিস্ফোরকমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”

গত সাত দিনে ১০০০ সকেট বোমা উদ্ধার এবং ২০ জন দুষ্কৃতি গ্রেফতার—মুর্শিদাবাদ পুলিশের এই সফলতা রাজ্যব্যাপী দুষ্কৃতিদমনে এক ইতিবাচক বার্তা। জেলার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—এই অভিযান আগামী দিনেও অবিরত চলবে এবং দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।