HomeBharatPoliticsSIR শুরুই হতেই মুর্শিদাবাদে উদ্ধার ১৫০ বোমা

SIR শুরুই হতেই মুর্শিদাবাদে উদ্ধার ১৫০ বোমা

- Advertisement -

মুর্শিদাবাদ: ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR শুরু হওয়ার মাত্র দু’দিনের মধ্যে এই সীমান্তবর্তী জেলায় ১৫০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। ড্রোনের নজরদারি, বোম স্কোয়াডের তৎপরতা এবং একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সার্চ অপারেশন এসবের জোরে পুলিশ এবং বিএসএফের যৌথ দল এমন একটা অভিযান চালিয়েছে, যা স্থানীয়দের মনে ভয়ের ছায়া ফেলেছে। গতকাল খারগ্রাম এলাকায় এক মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাড়িতে থেকে ৯টি লাইভ বোমা পাওয়া গেছে, আজ আবার কান্দি সাবডিভিশনে আরও ৬টি।

এছাড়া, সামশেরগঞ্জ, ডোমকাল এবং লালগোলা অঞ্চলে ছড়ানো অভিযানে বাকি বোমাগুলো উদ্ধার। এই ঘটনা শুধুমাত্র সামরিক সতর্কতা নয়, বরং মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক-সামাজিক জটিলতার একটা জীবন্ত স্মৃতি। এখানে ৭০ শতাংশেরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যা, এবং কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর অতীতের সেই বিতর্কিত মন্তব্য মনে পড়ে যায়: “মুর্শিদাবাদে ৭০ শতাংশ মুসলমান।

   

গভীর অন্ধকারে আইএসএল, কী বললেন দুই প্রধানের কর্মকর্তারা?

ফলে, তারা ভবিষ্যতে বড় বাংলাদেশ চাইবে।” এই কথাগুলো আজকের ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা স্থানীয় রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।সবকিছু শুরু হয়েছে গত ৪ অক্টোবর, যখন মুর্শিদাবাদের ডোমকাল এলাকায় এক নারীর মৃত্যু ঘটে একটা ক্রুড বোম তৈরির সময় বিস্ফোরণে। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর, ৫ অক্টোবর সকালে উসমান নামে এক যুবকও একইভাবে প্রাণ হারায় তার বাড়ির কাছে।

এই ব্যাক-টু-ব্যাক বিস্ফোরণের পর পুলিশ সিরিয়াস ইনসিডেন্ট রিপোর্ট জারি করে, যা মানে অভিযানের গিয়ার চেঞ্জ। স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, বিএসএফ এবং স্টেট সিআইডি-র বোম স্কোয়াড মিলে দল গঠিত হয়। ড্রোনের সাহায্যে স্ক্যান করা হয়েছে সীমান্তের কাছাকাছি গ্রামগুলো—যেমন খারগ্রাম, যেখানে বাকুল শেখ নামে এক ‘সায়েন্টিস্ট’ বলে পরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে ৯টা বোমা পাওয়া যায়।

তিনি একটা মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এবং স্থানীয় সূত্র বলছে, এসব বোমা ক্রুড টাইপের, যা স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আজকের অভিযানে কান্দি এলাকার সালার পুলিশ স্টেশনের অধীনে ৬টা বোমা উদ্ধার, এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট ১৫০টি বোমা—এর মধ্যে কিছু ডিফিউজড, কিছু নিষ্ক্রিয়। পুলিশের এক অফিসার বলেছেন, “এটা শুধু অভিযান নয়, সন্ত্রাসবাদী গতিবিধির সম্ভাবনা তদন্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে হওয়ায় আমরা সতর্ক।”এই ঘটনা মুর্শিদাবাদের সংবেদনশীলতা তুলে ধরে। জেলাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত, যেখানে ফেনসিডিল চোরাচালান, অবৈধ অভিবাসন এবং রাজনৈতিক হিংসা সবসময়ই একটা ছায়া ফেলে। ২০১১-এর জনগণনা অনুসারে এখানে মুসলিম জনসংখ্যা ৬৬.২৮ শতাংশ, কিন্তু স্থানীয় অনুমানে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই জনসংখ্যার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবসময়ই টানাপোড়েন।

এখানে কংগ্রেসের প্রভাব ছিল, কিন্তু এখন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির লড়াই চলছে। অধীর রঞ্জন চৌধুরী, যিনি বহুকাল এখানকার সাংসদ ছিলেন, ২০২২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে বলেছিলেন, “মুর্শিদাবাদে ৭০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা সত্ত্বেও এটা উন্নয়নশীল জেলা সরকারের অবহেলা।” কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় তাঁর এক বক্তব্য আরও বিতর্কিত হয়: “মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় ৭০ শতাংশ মুসলমান। ফলে, ভবিষ্যতে তারা বড় বাংলাদেশ চাইবে, এবং বাংলাদেশও এখানে দাবি তুলতে পারে।”

এই কথা তখন তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছিল। অধীরের সমর্থকরা বলেন, এটা সতর্কতার বার্তা, কিন্তু সমালোচকরা এটাকে ইসলামোফোবিক বলে অভিহিত করেছেন। আজকের বোমা উদ্ধারের ঘটনা সেই মন্তব্যকে নতুন করে জীবন্ত করে তুলেছে কারণ স্থানীয়রা বলছেন, “এসব চোরাচালান এবং রাজনৈতিক হিংসা সীমান্তের কারণে বাড়ছে।”

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular