রঙিন পথচিত্রে সাজছে মুকুটমণিপুর, কংসাবতীর পাড়ে নতুন আকর্ষণ

mukutmanipur-colorful-path-art

সোমনাথ মোদক বাঁকুড়া: জেলার রানি মুকুটমণিপুরের কংসাবতী জলাধারের পাড় এখন নতুন রঙে রঙিন। ধুলো-মাখা সাধারণ রাস্তা যেন শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে স্থানীয় শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায়। মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে রঙিন পথচিত্র, যা ইতিমধ্যেই পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এই শীতে মুকুটমণিপুর পেতে চলেছে একেবারে নতুন সাজ।

Advertisements

কংসাবতী জলাধারের পাড় ধরে চলা রাস্তার ওপর ফুটে উঠছে আলপনার সৌন্দর্য। স্থানীয় শিল্পীদের হাতে আঁকা এই পথচিত্রে ভেসে উঠছে মুকুটমণিপুরের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রতিফলন—কখনও নৌকা, কখনও ময়ূর, কখনও হরিণ বা মাছ। এই আলপনায় মিশে আছে এলাকার পরিচয়, গ্রামীণ ছোঁয়া আর শিল্পীর আবেগ। প্রতিদিনই রঙিনতর হয়ে উঠছে রাস্তা, আর শিল্পীরা উৎসাহে ভরপুর হয়ে আকাশরঙা সৃজনশীলতায় হারিয়ে যাচ্ছেন।

   

এ প্রকল্প শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুকুটমণিপুর সফরের সময়। শিল্পীদের হাতে তুলির নকশা দেখে তিনি প্রশংসা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে আঁকা আলপনার অনেকটাই সময়ের সঙ্গে মুছে গেলেও, এই বছর আবার নতুন করে শুরু হয়েছে পথচিত্র আঁকার কাজ। জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ৩৩০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে রঙিন হয়ে উঠছে প্রকৃতি, প্রাণীজগৎ আর মুকুটমণিপুরের স্থানীয় সৌন্দর্য।

মুকুটমণিপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন ও রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, “প্রতি বছরই শীতের মরশুমে এখানে পর্যটক ভিড় থাকে। তাই মুকুটমণিপুরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা আমাদের থাকে। এবছর পথচিত্রের মাধ্যমে জলাধারের পাড়ের সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ চলছে। পর্যটকদের মন জয় করবেই, এমন আশা আমাদের।”

শিল্পীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে এক বিশেষ আবেগ। তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের হাতের কাজ শুধু দেয়াল বা কাগজে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের হাঁটা চলার রাস্তার ওপর ফুটে ওঠা শিল্প যেন আরও বড় সুযোগ তাঁদের জন্য। শিল্পী দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুকুটমণিপুর অনেক বছর ধরেই পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। আমরা চাই আরও সুন্দরভাবে এই জায়গাকে সবার সামনে তুলে ধরতে। তাই এলাকার পরিচিত উপাদানগুলো রেখেছি নকশায়। যেন শিল্পের মধ্যেই ধরা পড়ে মুকুটমণিপুরের প্রাণ।”

Advertisements

প্রায় ১৫ জন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করছেন, দলগতভাবে। তাঁদের লক্ষ্য, ১৫ দিনের মধ্যে পুরো পথচিত্র আঁকার কাজ শেষ করা। মাঝেমাঝে তাঁরা নিজেদের মধ্যেই পরামর্শ করে নকশা বদলাচ্ছেন, রঙের ছোঁয়া বাড়াচ্ছেন। যেন প্রতিটি আঁচড়েই জীবন্ত হয়ে উঠছে মুকুটমণিপুর।

এদিকে পর্যটকরা ইতিমধ্যেই পথচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। কেউ বিস্মিত, কেউ আনন্দে আপ্লুত। অনেকে বলছেন, “এ রকম আলপনা আগে কখনও রাস্তার ওপর দেখিনি।” স্থানীয় মানুষও মনে করছেন, এই উদ্যোগ আসন্ন শীতের পর্যটন মরশুমে বিপুল সাড়া ফেলবে। কারণ মুকুটমণিপুরের প্রকৃতি যেমন সুন্দর, তেমনই এখন তার রাস্তার ওপরও সাজ ফুটে উঠছে।

রঙে সাজছে মুকুটমণিপুর—এই রঙিন পথচিত্র যেন শুধু সৌন্দর্য নয়, মানুষের মনেও ছড়িয়ে দিচ্ছে উৎসবের আবহ। পর্যটক, শিল্পী ও স্থানীয় মানুষের মিলিত উদ্যোগে এই শীতের মরশুমে মুকুটমণিপুর নতুন রূপে সেজে উঠবে, আর সেই রূপে মুগ্ধ হবেন আগত দর্শনার্থীরা—এমনটাই আশাবাদ সকলের।