মিলন পণ্ডা, চণ্ডিপুর: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে আবারও বড়সড় ধাক্কা খেল বিজেপি। ভগবানপুরে শুভেন্দুর ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’র দিনই পাশের বিধানসভা কেন্দ্র চণ্ডীপুরে বিজেপি যুব মোর্চা নেতৃত্বসহ প্রায় ৫০টি পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান (TMC mass joining) করায় জেলায় রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যোগদান সভায় উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক এবং কাঁথি সংগঠনীক জেলার তৃণমূল সভাপতি পীযুষকান্তি পণ্ডা। নবাগতদের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে তারা জানান, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রাজনীতিকে সমর্থন করতেই মানুষ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরছেন।”
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের এই ধারাবাহিক কর্মী টানার কৌশল বিজেপির জন্য বড় সংকেত। ভগবানপুর, রামনগর, পটাশপুর ও কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক মাস ধরেই ধীরে ধীরে বিজেপি ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। অনেকেই সংগঠনের ভাঙন, নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং কর্মী অসন্তোষকে এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন।
এদিন সভায় উত্তম বারিক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়ন হয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরেও তার সুফল পেয়েছে মানুষ। শিল্প, রাস্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। তাই দীর্ঘদিন বিজেপির সঙ্গে থাকা বহু পরিবার আজ তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন উন্নয়নের স্বার্থে।”
তিনি আরও দাবি করেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও বড়সড় যোগদান পর্ব দেখা যাবে। “শুভেন্দুর গড় বলে পরিচিত এলাকাগুলোতেও তৃণমূলের ভিত ক্রমশ শক্ত হচ্ছে,” বলেন বারিক।
যদিও বিজেপি এই যোগদানকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা সূর্যকান্ত বারগ বলেন, “তৃণমূল নিজেদের লোককেই আবার যোগদান করিয়ে প্রচার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এগুলো সব সাজানো নাটক। মানুষের সমর্থন তৃণমূল হারিয়েছে, তাই যোগদানকে হাতিয়ার করছে।”
বিজেপির দাবি, অনেক কর্মী প্রশাসনিক চাপ ও ভয়–ভীতি দেখানোয় প্রকাশ্যে তৃণমূলের পতাকা নিলেও অন্তরে তারা বিজেপির সঙ্গেই রয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংখ্যাটা ছোট হলেও প্রতীকী গুরুত্ব অনেক বেশি। পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর শক্ত ভিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূল যে ঘর মজবুত করছে, তা অস্বীকার করা যায় না। সংগঠন ধরে রাখা, কর্মীদের মনোবল বাড়ানো এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমানো এই তিনটি চ্যালেঞ্জ বিজেপির সামনে এখন সবচেয়ে বড়।
