বারাসাত, ২৫ নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁ সফর শেষ হয়েছে অভূতপূর্ব উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। বনগাঁয়ের মতুয়া মহাসম্মেলন থেকে ফিরছিলেন তিনি, যেখানে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) বিরোধী র্যালিতে হাজার হাজার মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক উপস্থিত ছিল। কিন্তু ফেরার সময় বারাসাতের রাস্তায় তার কনভয়ের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা।
কারণ? এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত যুবকের মৃতদেহ থেকে চোখ খুলে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ। বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলমান বিক্ষোভের মুখে হঠাৎ চলে আসা মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় অবরোধে আটকে পড়লে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। কিন্তু মমতার স্বাক্ষাত আশ্বাসে—যথাযথ তদন্তের প্রতিশ্রুতি—জনতা শান্ত হয়েছে এবং অবরোধ তুলে নিয়েছে। এই ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলার গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত বারাসাতের নয়নপুর এলাকায়। গতকাল রাতে ২৫ বছরের যুবক সৌম্য রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তাকে তাড়াতাড়ি বারাসাত জগন্নাথ গুপ্ত হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানকার চিকিত্সকরা বলেন, অবস্থা গুরুতর। পরে তাকে বারাসাত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সকালবেলা সৌম্য মারা যান। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর পর তার মর্গে চোখ খুলে নেওয়া হয়েছে, যা তারা ‘চোখ বিক্রির চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করছে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, “আমাদের ছেলের চোখ দুটো ছিল সুস্থ, কিন্তু মৃতদেহে ফিরে এলে চোখের গর্ত খালি। হাসপাতাল কর্মীরা বলছে, দুর্ঘটনায় চলে গেছে, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না। এটা অঙ্গ বিক্রির ষড়যন্ত্র।” এই অভিযোগ ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। যুবকের বন্ধু-বান্ধব, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারণ মানুষ রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই বনগাঁ থেকে ফিরছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বনগাঁয়ের ত্রিকোণ পার্কে এসআইআর বিরোধী মহার্যালিতে তিনি বলেছিলেন, “এসআইআর-এর নামে আমাদের ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের এই ষড়যন্ত্র আমরা সহ্য করব না।” মাতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে এসআইআর-এর কারণে নাম কাটার ভয় ছড়িয়ে পড়েছে, যা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের জন্য চ্যালেঞ্জ। র্যালির পর চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগরের দিকে মার্চের পর কনভয় বারাসাতের পথে এসে আটকে যায়।
