শান্তনু পান, পূর্ব মেদিনীপুর: লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প (Laxmir Bhandar scheme) বন্ধ থাকা নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। অভিযোগ, বিজেপি পরিচালিত বাকচা ও গোজিনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে যখন বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র অভিযোগ তুলেছে, অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছে এটি প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত সমস্যার ফল, শিগগিরই সমাধান করা হবে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ময়নার বাকচা ও গোজিনা গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করে। তারপর থেকেই রাজনৈতিক উষ্ণতা লেগে রয়েছে এই এলাকায়। বর্তমানে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প বন্ধ থাকার প্রশ্নে সেই উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও জেলা পরিষদ সদস্যদের দাবি, শুধুমাত্র বিজেপি পরিচালিত অঞ্চল হওয়ার কারণেই এই দুই পঞ্চায়েতের মহিলাদের আর্থিক সহায়তা আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্য টাকা ঢুকছে না এবং প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করা হলেও কোন সমাধান মিলছে না।
বিজেপি নেতৃত্ব আরও জানিয়েছে, লক্ষ্মীর ভান্ডার শুধু একটি প্রকল্প নয়, বহু পরিবারের মাসিক খরচ, ওষুধ, পড়াশোনা এবং দৈনন্দিন আর্থিক চাহিদা এই টাকার উপর নির্ভরশীল। ফলে বেশ কয়েক মাস ধরে টাকা বন্ধ থাকায় এলাকার মহিলারা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে বিজেপি আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “সরকারি প্রকল্পে রাজনীতি ঢোকানো চলবে না, মহিলাদের প্রাপ্য অধিকার অবিলম্বে দিতে হবে।”
অন্যদিকে, ময়নার সাধারণ মহিলাদের মধ্যেও জমেছে ক্ষোভ। বাকচা ও গোজিনার বহু উপভোক্তা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সচল থাকা সত্ত্বেও মাসের পর মাস টাকা ঢুকছে না। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার আমাদের সংসারের বড় অবলম্বন। রাজনীতি কে করছে জানি না, কিন্তু তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। পঞ্চায়েতে, বিডিও অফিসে বারবার গিয়েও কোন উত্তর পাইনি। আমরা চাই দ্রুত টাকা দেওয়া শুরু হোক।” আরেক মহিলা জানান, “গ্যাস, বাজার, বাচ্চাদের পড়া—সব কিছুর খরচ এই টাকার ওপর নির্ভরশীল। আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়েছি। আমাদের দাবির রাজনীতি নয়, আমরা শুধু আমাদের অধিকার চাই।”
যদিও এই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান আলী বলেন, “শুধু বাকচা ও গোজিনা নয়, ময়নার আরও কয়েকটি এলাকায় একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে প্রশাসনিক সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত। ইতিমধ্যেই বিডিও, জেলাশাসক এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পিএফএমএস সিস্টেমে কিছু ত্রুটি ও নথিপত্র যাচাই সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছু ভাতা আটকে গেছে। আমরা আশ্বাস দিচ্ছি, খুব দ্রুত পরিষেবা পুনরায় চালু হবে এবং মহিলারা তাদের প্রাপ্য টাকা পাবেন।”
জেলা প্রশাসন সূত্রেও জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই, আধার সংযোগ সংক্রান্ত সমস্যা বা সার্ভার জনিত ত্রুটির কারণেও অনেক সময় অনুদান আটকে যেতে পারে। যদিও কেন নির্দিষ্ট করে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত এলাকায় বেশি অভিযোগ আসছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা মেলেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং শীঘ্রই সমাধান করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো জনপ্রিয় প্রকল্প নিয়ে যে কোনও বিতর্ক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ রাজ্যের কোটি কোটি মহিলা এই প্রকল্পের উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল। ফলে এই প্রকল্পে সামান্য অনিয়ম বা অভিযোগও রাজনৈতিক ময়দানে বড় ইস্যু হয়ে ওঠে।
