নীরব প্রশাসন! বেআইনি মদের আড্ডা ভাঙলেন রনংদেহীরা

kharagpur-illegal-liquor-protest-women-action-2025

খড়গপুর: খড়গপুরের বারবেডিয়ার পূর্বপাড়ার শান্তিপূর্ণ রাত হঠাৎই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শনিবার। এলাকাজুড়ে শতাধিক মহিলার গর্জন “আর নয়! এলাকায় মদের দোকান চলবে না!” দীর্ঘদিন ধরে চলা বেআইনি মদের ব্যবসা, অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুর পরও প্রশাসন নীরব। এই নিরাবতা ভেঙে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই নামলেন আন্দোলনে।

Advertisements

বছর খানেক আগেই মদের নেশায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন এলাকার তিরিশোর্ধ্ব এক যুবক। তার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল পাড়ায়। অনেক পরিবার জানিয়েছেন, তাঁদের স্বামীরা এই নেশার কারণে লিভার ও কিডনির রোগে আক্রান্ত। তবুও, মদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। অভিযোগ, বারবার খড়গপুর থানায় অভিযোগ করেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

SIR নিয়ে মমতার সঙ্গে একই তরীতে স্ট্যালিন

শনিবার রাতে এলাকার প্রায় শতাধিক মহিলা হাতে লাঠি, বাঁশ, লোহার রড নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁরা অভিযুক্তদের ঘরবাড়িতে ঢুকে ফ্রিজের ভিতর লুকিয়ে রাখা বোতলগুলি এক এক করে ভেঙে ফেলেন। এরপর তারা বেআইনি দোকানগুলিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে, এক ব্যক্তি তাঁদের বাধা দিতে গেলে তাঁকে ধরে টানা হিঁচড়া করা হয় বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় মহিলাদের বক্তব্য “আমরা অনেকদিন ধরে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু আর নয়। এই মদের জন্য আমাদের ঘরে ঘরে কান্না। কেউ মারা গেছে, কেউ অসুস্থ। পুলিশকে বলেও কিছু হয়নি। তাই নিজেরাই নামতে হয়েছে,” বললেন প্রতিবাদী মহিলাদের একজন, সুনীতা পাত্র।

Advertisements

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অবৈধ মদের কারবার দিনের আলোতেও চলে। ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার পথে দেখে বোতল খুলে নেশা করছে কিছু যুবক। “এলাকার পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,” বলেন আর এক মহিলা, যিনি নিজেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেখেছেন।

এই ঘটনার পর খড়গপুর পৌরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত বড় পরিসরে বেআইনি মদের ব্যবসা চললেও পৌরসভা বা পুলিশ প্রশাসন কেন এখনো নীরব? পৌরসভার এক কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি পুলিশের নজরে এনেছি। প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বেআইনি ব্যবসা চলতে দেওয়া হবে না।”

খড়গপুর থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এলাকাবাসী এখনই আশ্বস্ত নন। তাঁদের মতে, “কাগজে কলমে তদন্ত অনেক হয়েছে, এবার চাই বাস্তব পদক্ষেপ।” সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি পাড়ার ক্ষোভ নয়, এটি গোটা রাজ্যের গ্রামীণ সমাজে বাড়তে থাকা নেশাজনিত সমস্যার প্রতিফলন।

যখন প্রশাসন নীরব, তখন সাধারণ মহিলারাই সমাজরক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছেন এটি এক ধরনের সামাজিক প্রতিবাদ। এলাকায় এখনো ভয়ের বাতাবরণ। তবে মহিলাদের দৃঢ় অবস্থান একটাই বার্তা দিচ্ছে “আমরা নেশামুক্ত পাড়া চাই, নেশামুক্ত ভবিষ্যৎ চাই।”