খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর: রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরি ১ ব্লকের বীরবন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে শনিবার সন্ধ্যায় যোগদান করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি শেখ আবেদ আলি। বিজেপির খেজুরি বিধায়ক শান্তনু প্রামানিকের হাত ধরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান।
এই যোগদানকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে—সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক কি তৃণমূল থেকে সরে যাচ্ছে?
বৈঠকের আবহ
শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খেজুরি বিধায়ক শান্তনু প্রামানিক, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি শেখ তৈমুর আলি, সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্ব ও মণ্ডল সভাপতিরা। বৈঠকের মধ্যেই ঘোষণা হয় আবেদ আলির যোগদানের।
বিজেপির দাবি, এ ঘটনা প্রমাণ করছে যে সংখ্যালঘু ভোটাররা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।
শেখ আবেদ আলির বক্তব্য
বিজেপিতে সদ্য যোগদান করা শেখ আবেদ আলি বলেন,
“আমি খেজুরি বীরবন্দ অঞ্চলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ছিলাম, তৃণমূলের হোল টাইমার ছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের দুর্নীতি ও অপশাসন দেখে আর থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। আগামী দিনে আরও ৬০টি পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করবে।”
বিজেপি নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া
খেজুরি বিধায়ক শান্তনু প্রামানিক বলেন,
“তৃণমূলের অপশাসন ও নৈরাজ্য থেকে মানুষ আজ বিরক্ত। তাই শেখ আবেদ আলির মতো নেতারা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে হারানোর।”
অন্যদিকে, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি শেখ তৈমুর আলি বলেন,
“তৃণমূল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভুল বুঝিয়ে রেখেছে। কিন্তু আর মানুষ বোকা নয়। আগামী দিনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আরও অনেকে বিজেপিতে যোগ দেবেন।”
তৃণমূলের পাল্টা জবাব
যদিও এই যোগদানকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ শাসক দল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি,
“ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই আবেদ আলি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এলাকায় তার তেমন কোনো জনসমর্থন নেই। এতে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
রাজনৈতিক তাৎপর্য
সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এবার খেজুরির মতো সংবেদনশীল এলাকায় সংখ্যালঘু নেতার বিজেপিতে যোগদান রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিজেপির কাছে এটি নিঃসন্দেহে উৎসাহের খবর, তবে তৃণমূল এটিকে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দিতে চাইছে।
খেজুরির এই যোগদানকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়েছে। সংখ্যালঘু ভোটে বিজেপির থাবা বসানো কতটা গভীর প্রভাব ফেলবে, তা বোঝা যাবে আগামী নির্বাচনে। আপাতত শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপি, উভয় পক্ষই নিজেদের মতো করে এই ঘটনাকে ব্যাখ্যা করছে।


