ধর্মীয় উৎসবে রামকৃষ্ণ পরিবারের উত্তরসূরিকে পিটিয়ে খুন

kamarpukur-ramachandra-ghoshal-lynched-tmc-violence

হুগলি: ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু কামারপুকুর। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন মহান সাধক শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। কিন্তু সেই পবিত্র ভূমি এখন আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দু। তার কারণ এখানেই এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহত ব্যক্তি আর কেউ নন, স্বয়ং রামকৃষ্ণ দেবের মাতৃপরিবারের উত্তরসূরি রামচন্দ্র ঘোষাল, যিনি কামারপুকুর মন্দিরেরই পুরোহিতের পুত্র।

Advertisements

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে, মন্দির থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে। অভিযোগ, স্থানীয় এক উৎসব চলাকালীন বিবাদের জেরে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং শেষমেশ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভের ছায়া। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কামারপুকুরে একটি বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা জগবন্ধু ঘোষ।

   

উৎসবের মরশুমে সমস্ত রেকর্ড ভাঙল UPI পেমেন্ট, ১৭.৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন

সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামচন্দ্র ঘোষালও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সঙ্গে তাঁর বচসা বাঁধে। বচসা মুহূর্তেই হাতাহাতিতে পরিণত হয় এবং পরে তাঁকে লক্ষ্য করে ব্যাপক মারধর শুরু হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “আমরা দেখেছিলাম, রামচন্দ্রবাবুকে ৪-৫ জন ঘিরে ধরে লাঠি ও লাথি-ঘুষিতে আঘাত করছে। কেউ তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাকেও হুমকি দেওয়া হয়।” অভিযোগ, হামলাকারীরা স্থানীয় শাসকদলের সমর্থক। তাঁদের নাম ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

নিহতের পরিবার দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত দুষ্কৃতীরাই রয়েছে। রামচন্দ্রবাবুর বাবা, যিনি মন্দিরের পুরোহিত, ভেঙে পড়ে বলেন, “আমার ছেলেকে আমি নিজের হাতে বড় করেছি। সে রামকৃষ্ণঠাকুরের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিল। আজ পবিত্র মন্দিরের কাছেই ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। আমরা বিচার চাই।”

Advertisements

ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের বক্তব্য, “যেখানে রামকৃষ্ণ পরমহংসের আশ্রম, সেখানেই যদি নিরাপত্তা না থাকে, তবে রাজ্যের সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?” রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তীব্র ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, “যে রাজ্যে পবিত্র তীর্থভূমির পাশে একজন পুরোহিতের পুত্রকে পিটিয়ে মারা হয়, সেখানে আইনের শাসন বলে কিছুই নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বক্তৃতা দেন, কিন্তু হিন্দুদের সুরক্ষা দিতে পারেন না।”

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেছে, “ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিবাদের ফল।” তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষের বক্তব্যে সায় দেয়নি। তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামচন্দ্র ঘোষাল ছিলেন শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তিনি প্রতিদিন মন্দিরে পূজা করতেন এবং আশ্রমের অতিথিদের যত্ন নিতেন।

তাঁর মৃত্যুতে কামারপুকুর আশ্রম এবং রামকৃষ্ণ মিশনের ভক্তমহলে গভীর শোক নেমে এসেছে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি প্রাণহানির ঘটনা নয় এটি সেই ভূমির উপর এক কালো ছায়া, যেখানে একসময় প্রেম, ভক্তি ও সহিষ্ণুতার বাণী ছড়িয়ে পড়েছিল রামকৃষ্ণ পরমহংসের মুখ থেকে।