HomeWest BengalSouth Bengalপুলিশি অভিযানে সীমান্তে আটক আট বালিভর্তি ট্রাক, গ্রেফতার ৫

পুলিশি অভিযানে সীমান্তে আটক আট বালিভর্তি ট্রাক, গ্রেফতার ৫

- Advertisement -

ঝাড়গ্রাম: ঝাড়খণ্ড সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল একটি সুসংগঠিত বালিমাফিয়া চক্র (sand smuggling)। রাতের অন্ধকার নামলেই শুরু হত ট্রাকের সারি একের পর এক গাড়ি চোরাপথ দিয়ে ঢুকে পড়ত ঝাড়খণ্ড থেকে, কখনও বা পার হত ঝাড়গ্রামের নদী লাগোয়া অঞ্চল। বারবার অভিযোগ উঠলেও পাচারের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী ছিল যে প্রশাসনের পক্ষে সেই প্রবাহ আটকানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সোমবার গভীর রাতে সেই চক্রে বড় আঘাত হানল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। মানিকপাড়া ফাঁড়ির উদ্যোগে হওয়া বিশেষ অভিযানে একাধিক ট্রাক আটক হওয়া এবং পাচারচক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পাওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকায় নাকা চেকিং জোরদার করা হয়। নদীপথ, গোপন রুট ও মাটির রাস্তা সব জায়গাতেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাতভর ধারাবাহিক অভিযান চালানোর পর আটটি বালি বোঝাই ট্রাক আটক করে পুলিশ। প্রতিটি ট্রাকেই বিপুল পরিমাণ বালি ছিল, যা দেখে পুলিশ মনে করছে এটি কোনও ছোটখাটো পরিবহণ নয়, বরং একটি বড় মাফিয়া চক্রের নিয়মিত পাচার কাজের অংশ।

   

গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন গৌতম পাত্র ও সুনীল পাত্র ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার বালিচুয়া গ্রামের বাসিন্দা। বাকি তিনজনের মধ্যে কৃষ্ণ পাতর ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া থানার কদমডিহা গ্রামের, ভূপেন মুর্মু বেলিয়াবেড়া থানার পোরাডিহা গ্রামের এবং সমর সাধন বিনপুর থানার মেঘাবাঁধি গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা বালিবোঝাই ট্রাক চালানো এবং পাচার নিশ্চিত করার কাজে যুক্ত ছিল।

অভিযানের সময় ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের কাছে বৈধ নথিপত্র চাওয়া হলেও কেউই অনুমোদিত কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। এর পরেই সমস্ত ট্রাক বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং অভিযুক্তরাও আটক হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ধৃতদের ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, হেফাজতে থাকাকালীন ধৃতরা এই পাচারচক্রের মূল মাথাদের নামসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে।

অভিযানে যুক্ত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এই চক্রের পেছনে রয়েছে বড়সড় মাফিয়া নেটওয়ার্ক। কারা বালি তুলছিল, কোথায় পাঠানো হত, কারা সুরক্ষা দিত সবই তদন্তে উঠে আসবে। আমরা গোটা নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।” তিনি আরও জানান, সীমান্তবর্তী এলাকা জুড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম আর কোনও বেআইনি পরিবহণ যেন না হয়, সে বিষয়ে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম ও ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অবৈধ বালি উত্তোলন ও পাচার ব্যবসা প্রায় শিল্পের রূপ নিয়েছে। নদীর চর থেকে রাতের অন্ধকারে বালি তুলে ট্রাকে চাপিয়ে পাচার করা হত প্রতিবেশী রাজ্যে। এতে শুধু পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল না, সরকারের রাজস্বেও বড় ধাক্কা লাগছিল।

ঝাড়গ্রাম পুলিশের এই সফল অভিযান সেই বেআইনি বালিপাচার নেটওয়ার্কে বড়সড় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর আশা, এই টানা কড়াকড়ির ফলে সীমান্ত এলাকা অবৈধ পাচারমুক্ত হবে এবং বহুদিন ধরে চলা বালিমাফিয়াদের দৌরাত্ম্য কমবে। তদন্তে আরও বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular