ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশে গ্রেফতার ৭৯ বাংলাদেশি

উত্তর বঙ্গোপসাগরে ফের বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে তিনটি বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলারকে (Bangladesh trawler) আটক করল ভারতীয় কোস্ট গার্ড। ১৫ ও ১৬ নভেম্বর, পরপর দু’দিন IMBL বা আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমারেখা জুড়ে নজরদারি চালানোর সময় ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEZ)-এর প্রায় ২ নটিক্যাল মাইল ভেতরে মাছ ধরতে দেখা যায় ট্রলারগুলোকে। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় টহল জাহাজ ICGS Amrit Kaur এবং ICGS Kamla Devi।

Advertisements

কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক তিনটি Bangladesh Fishing Boats (BFBs)-এ মোট ৭৯ জন জেলে ছিল যার মধ্যে তিনজন নাবালকও রয়েছে। ভারতীয় জলসীমায় বিদেশি জাহাজ দ্বারা মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এটি সরাসরি লঙ্ঘন Maritime Zones of India (Regulation of Fishing by Foreign Vessels) Act, 1981 বা MZI আইনের।

   

অভিযানের সময় ট্রলারগুলোকে থামতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ অমান্য করলে কোস্ট গার্ডের বোর্ডিং টিম দ্রুত তিনটি ট্রলারে আরোহণ করে। তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক ট্রলারে বড় আকারের মাছ ধরার জাল, বরফভর্তি সংরক্ষণ ট্যাঙ্ক এবং সদ্য ধরা বিপুল পরিমাণ মাছ রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে তারা নিষিদ্ধ EEZ এলাকায় সক্রিয়ভাবে মাছ ধরছিল।

বোর্ডিং অফিসারদের বক্তব্য, আটক জেলেদের কারোর কাছেই ভারতীয় EEZ-এ প্রবেশ বা মাছ ধরার কোনও অনুমোদনপত্র ছিল না। GPS, কম্পাস এবং আধুনিক ন্যাভিগেশন সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও ট্রলারগুলো ২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সীমা অতিক্রম করল কীভাবে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশি জেলেরা দাবি করেছে, দীর্ঘদিন সমুদ্রে থাকার কারণে তারা দিক ভুলে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়েছে। তবে কোস্ট গার্ড কর্মকর্তাদের মতে, “সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলে নিয়মিত অনুপ্রবেশের ঘটনাগুলি শুধুই পথভ্রষ্টতার যুক্তিতে ব্যাখ্যা করা যায় না।”

Advertisements

তল্লাশি শেষ হওয়ার পর তিনটি ট্রলার এবং ৭৯ জন জেলেকে আটক করে ফ্র্যাজারগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মেরিন পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য। প্রাথমিকভাবে MZI আইন ভঙ্গের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের হয়েছে।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সমাজের অভিযোগ, প্রতিবছর শতাধিক বাংলাদেশি ট্রলার ভারতীয় EEZ-এ ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এর ফলে ভারতীয় জেলেদের জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গভীর সমুদ্রে নিষিদ্ধ ধরনের জালের ব্যবহারেও পরিবেশগত ক্ষতি বাড়ছে।

এক সিনিয়র কোস্ট গার্ড অফিসার বলেন,  “সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা এবং দেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। বিদেশি জাহাজ বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে একাধিক আলোচনা হলেও অনুপ্রবেশের ঘটনা কমেনি। ফলে কোস্ট গার্ডের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে বলে সূত্রের খবর। অভিযানের পর এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে কোস্ট গার্ডের এই দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ।