ভারতীয় কোস্ট গার্ডের অভিযানে শ্রীঘরে ২৯ বাংলাদেশি

indian-coast-guard-bangladesh-fishermen-arrest-fraserganj

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সুন্দরবনের উপকূলে আবারও বড়সড় নিরাপত্তা অভিযান চালালো ভারতীয় কোস্ট গার্ড। শনিবার গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল সংলগ্ন ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করা একটি বাংলাদেশি মৎস্যজীবী নৌকাকে আটক করে কোস্ট গার্ড। নৌকায় থাকা মোট ২৯ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে হস্তান্তর করা হয় উপকূলীয় পুলিশর কাছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বেআইনি মাছধরার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisements

সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরেই ওই অঞ্চলে সন্দেহজনক নৌচলাচল নজরে পড়ছিল। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া জলপথ হওয়ায় এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক চোরাচালান, বেআইনি মাছধরা ও সীমান্ত লঙ্ঘনের নজরদারি জোন হিসেবে পরিচিত। সেই মতো নিয়মিত টহল দিচ্ছিল ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জাহাজ। রাত প্রায় ২টো নাগাদ রাডারে ধরা পড়ে একটি দ্রুতগতির ছোট নৌকা, যেটি ভারতের নির্দিষ্ট সামুদ্রিক সীমার ভেতরে ঢুকে পড়েছিল।

   

বাংলাদেশকে পরজীবী রাষ্ট্র বলে বিস্ফোরক তথাগত

তারপরই শুরু হয় টহলদার জাহাজের তৎপরতা। কোস্ট গার্ড জাহাজটি স্পটলাইট চালু করে নৌকাটিকে বারবার থামার নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রথমে নৌকাটি পালানোর চেষ্টা করে। এরপরই কোস্ট গার্ডের টহল দল দ্রুতগতিতে সেটিকে ঘিরে ফেলে। প্রায় দশ মিনিটের চেজের পর নৌকাটিকে নিয়ন্ত্রণে আনে কোস্ট গার্ড। বোর্ডিং টিম উঠে দেখে নৌকাটিতে ২৯ জন জেলে রয়েছেন, সবাই বাংলাদেশের ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের বাসিন্দা বলে জানা যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দাবি করেন, মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা ভেসে ভারতীয় সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু কোস্ট গার্ডের সন্দেহ—রাতের অন্ধকারে বারবার সীমারেখা অতিক্রম করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে। নৌকাটিতে কোনো GPS ট্র্যাকার বা বৈধ অনুমতি ছিল না। তাছাড়া নৌকাটি ভারতের অন্তত ৮ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল ভেতরে ঢুকে পড়েছিল, যা শুধুমাত্র ‘ভুল করে ঢুকে পড়া’র সাথে মেলে না।

Advertisements

তারপর তাদের আটক করে ফ্রেজারগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে সকলকে হস্তান্তর করা হয় কোস্টাল পুলিশ থানার হাতে। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকের অনুমতি ছাড়া ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ একটি গুরুতর অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে Foreigners Act, Maritime Zones of India Act, এবং বেআইনি মাছধরার ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

স্থানীয় জেলেদের মতে, এ ধরনের অনুপ্রবেশ প্রায়ই ঘটে এবং এর ফলে ভারতীয় মাছের মজুদে চাপ বাড়ছে। “বিদেশি ট্রলারেরা বড় জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি,” বলেন কাকদ্বীপের এক মৎস্যজীবী। অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুন্দরবন সীমান্ত সবসময়ই সংবেদনশীল এলাকা।

শুধু মৎস্য চোরাশিকার নয়, এর আড়ালে কখনো কখনো পাচারচক্রও সক্রিয় থাকে। তাই কোস্ট গার্ডের এই অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোস্ট গার্ডের এক আধিকারিক জানান, “ভারতীয় জলসীমায় বেআইনি প্রবেশ কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের নজরদারি আরও জোরদার হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।”