ঘাটাল: আবহাওয়া দপ্তর থেকে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি (Ghatal rain alert) হতেই ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা মহকুমার কৃষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে চরম দুশ্চিন্তা। মাঠজুড়ে এখন পাকা ধান কাটার মরসুম। কিন্তু বৃষ্টি নামলে ধান ভিজে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সময়মতো আলু লাগানোও বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করেছেন কৃষকরা। ফলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ধান কাটার হুড়োহুড়ি হারভেস্টার মেশিন, ট্র্যাক্টর, গরুর গাড়ি, এমনকি মাথায় বোঝা নিয়ে ধান তোলার দৃশ্যও এখন এলাকায় নিত্যদিনের ঘটনা।
ঘাটাল মহকুমার দেবোল, মুগিহাট, কানকাটি, সাধুখাঁটাল, আনন্দপুর, চন্দ্রকোনা রোড এমন বেশ কয়েকটি গ্রামজুড়ে পাকা ধানের ক্ষেত এখন কাটার শেষ পর্যায়ে। কৃষকদের দাবি, আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি শুরু হলে প্রথম ক্ষতি হবে ধানে। জল পড়লে ধানের মানও নষ্ট হয়। একই সঙ্গে আলু লাগানোর সঠিক সময় খুবই সীমিত ফলে এই বৃষ্টি কৃষকদের চাষচক্রকেই ওলটপালট করে দিতে পারে।
ঘাটালের কৃষক স্বপন ঘোষ জানান, “বৃষ্টির দুঃস্বপ্ন এখনই শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে দু’দিন বৃষ্টি হবে। পাকা ধান যদি মাঠে ভিজে যায়, তখন আর বাঁচানো যায় না। আর ধান কাটতে দেরি হলে আলু চাষ পিছিয়ে যাবে—ক্ষতির পরিমাণ তখন বহুগুণ হবে।”
অন্যদিকে চন্দ্রকোনার কৃষক মহাদেব দোলইয়ের বক্তব্য, “এই সময় বৃষ্টি হলে মেশিন মাঠে নামানো যাবে না। কাদায় মেশিন আটকালে দিন-দিন কাজ বন্ধ থাকবে। ধান গেলে দানা নষ্ট, আর আলুর জমি তৈরি করতেও বেশি সময় লাগে। দুই দিকেই ক্ষতি।”
কৃষকদের মতে, এ বছরের বর্ষা আগেই চাষবাসে বিপর্যয় তৈরি করেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি, আর্দ্রতা এবং সময়মতো সেচ না পাওয়ার কারণে ধানের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় কম হতে পারে। তাই তারা আরও বেশি উদ্বিগ্ন কারণ মরসুম শেষের এই সময়ে আবার নতুন বৃষ্টির পূর্বাভাস তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই নিম্নভূমি। ফলে ভারী বৃষ্টি হলে মাঠজল জমে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কৃষি দপ্তর কৃষকদের যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে বীজ, সার ও পরামর্শে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে।
এক কৃষক বলেন, “এ বছর যদি ধান ঠিকমতো বিক্রি না হয় আর আলুর দাম পড়ে যায়, তাহলে আমাদের বছরের অর্ধেক আয় বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ভরসা শুধু পূর্বাভাস যেন ভুল প্রমাণিত হয়।” ঘাটাল মহকুমার কৃষকদের মুখে আজ একটাই কথা “আগে ধান ঘরে, তারপর বৃষ্টি যাই হোক।”
