ঘাটাল: মাঠে আলু চাষ করতে করতে সাধারণ মানুষের SIR ফর্ম পূরণ করছেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক (Ghatal BJP MLA) শীতল কপাট। এমনই এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। লুঙ্গি, গেঞ্জি আর মাথায় গামছা বেঁধে জমিতে বীজ আলু বসাচ্ছেন তিনি। কৃষিকাজের মাঝেই কেউ SIR ফর্ম হাতে এগিয়ে এলে কাদামাটিতেই বসে তা পূরণ করে দিচ্ছেন বিধায়ক। আর এতেই নতুন করে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বেড়েছে ঘাটালে।
এই ভিডিও সামনে আসতেই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষের তির ছুঁড়েছে শীতল কপাটের দিকে। তাদের দাবি, ভোটের ঠিক আগে ‘মাটির মানুষ’ সাজতে গিয়ে অভিনয় করছেন বিজেপি বিধায়ক। ঘাটালের তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, “পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নে শূন্য কাজ। এখন নির্বাচন সামনে বলে কৃষকের সাজ ধরা হচ্ছে। মানুষ সব দেখছে, সময় এলে জবাব দেবে।”
শীতল কপাট অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য, “আমরা কৃষক পরিবার। আমার বাবা সারাজীবন চাষ করে আমাদের মানুষ করেছেন। প্রতি বছর আলুর এই একটি চাষে আমি নিজেও হাত লাগাই। মানুষের কেউ SIR ফর্ম নিয়ে এসেছে, তাই দেখে দিয়েছি এতে ভুল কোথায়?” পাশাপাশি তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “আমরা কাটমানি করি না, দুর্নীতি করি না। আমাদের বাড়িতে টাকার স্তূপ নেই। বিধায়কের চেয়ার আজ আছে, কাল নাও থাকতে পারে; কিন্তু চাষ তো করতেই হবে।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ভিডিও ঘাটালের নির্বাচনী লড়াইকে আরও ঘনীভূত করবে। কারণ শীতল কপাট গত কয়েক বছরে নানা ইস্যুতে শিরোনামে থেকেছেন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, শিশু মেলা, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এমনকি কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। এবার কৃষকের বেশে মাঠে নেমে তার রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট ‘মাটির মানুষ হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা’।
বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা দাবি করেছেন, শীতল কপাট সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত। “তিনি অভিনয় করেন না, এটা তার স্বাভাবিক জীবনযাপন” এমনটাই দাবি তাদের। অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, “এই সব নাটক আর কাজে আসবে না। ঘাটালের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি কোনও দিন কিছু করেনি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া মিলছে। কেউ বলছেন, “এটাই প্রকৃত মানুষের নেতা হওয়া উচিত,” আবার কেউ লিখেছেন, “ভোট এলেই হঠাৎ কৃষকের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায় নেতাদের।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের আগে এ ধরনের ‘গ্রাউন্ড কানেকশন’ প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও ভোটাররা শেষমেশ বিচার করবে গত পাঁচ বছরের কাজের ভিত্তিতে। মাঠে নেমে আলু চাষ হোক বা ফর্ম ফিলাপ রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি নির্ভর করবে মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর।
