মিলন পণ্ডা, হেঁড়িয়া: দিঘা–নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়কে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় (Digha road accident) মৃত্যু হল এক পর্যটক গাড়ি চালকের। আহত হলেন আরও চার পর্যটক। বৃহস্পতিবার হেঁড়িয়া হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’টি পর্যটকবাহী গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে গাড়ি দু’টি সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং গোটা সড়কজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চালকের নাম বুবাই দাস (২৫)। তাঁর বাড়ি কলকাতার দমদম এলাকায়। তিনি পেশায় পর্যটক গাড়ির চালক ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি চার পর্যটককে নিয়ে দিঘা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। ঠিক সেই সময় উল্টো দিক থেকে দিঘাগামী একটি পর্যটকবাহী গাড়ি দ্রুত গতিতে আসছিল।
হেঁড়িয়া হাসপাতালের সামনে ১১৬বি জাতীয় সড়কের উপর দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ধাক্কার তীব্রতায় একটি গাড়ি পাশের লেনে ছিটকে গিয়ে একটি টোটোতেও সজোরে আঘাত করে। যদিও সেই টোটো চালক বড় রকমের আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের মুহূর্তে বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে জাতীয় সড়ক। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারাই আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
হেঁড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। রাস্তা থেকে দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। দুর্ঘটনার জেরে প্রায় আধ ঘণ্টা জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছিল।
দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম চালক বুবাই দাসকে প্রথমে হেঁড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা চার পর্যটক গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে কারও মাথায়, কারও বুকে এবং কারও পায়ে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে, বিপরীত দিকের গাড়িতে থাকা দু’জন অল্প চোটে প্রাণে রক্ষা পেলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে দমদমের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনায় আহতদের সহযাত্রী সৈকত পাঁজা বলেন, “দিঘা থেকে ফিরছিলাম। হঠাৎই দেখলাম উল্টো দিক থেকে একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসছে। কিছু বোঝার আগেই বিকট শব্দে আমাদের গাড়িতে ধাক্কা লাগে। সবকিছু মুহূর্তে ওলটপালট হয়ে যায়। আমার মনে হয়েছে, অন্য গাড়িটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, এমনকি তিনি মদ্যপ অবস্থায়ও থাকতে পারেন।” যদিও এই অভিযোগ এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ, তদন্তে সেই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হেঁড়িয়া তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ আসিফ উদ্দিন জানান, “দুর্ঘটনাগ্রস্ত দুটি গাড়ি আটক করা হয়েছে। আহত চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাড়ির গতি, চালকের অসাবধানতা, বা যান্ত্রিক ত্রুটি সমস্ত দিক তদন্ত করা হবে।”
এই দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ১১৬বি জাতীয় সড়কে প্রতিদিন বহু পর্যটকের গাড়ি চলাচল করে। বেপরোয়া গতি, ওভারটেক প্রবণতা এবং যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে বারবার দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষত দিঘা রুটে পর্যটকের চাপ বাড়লে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এই পথটিতে পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে, বুবাই দাসের মৃত্যুর খবর কলকাতার দমদমে তাঁর বাড়িতে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবককে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিজনরা। প্রতিবেশীরাও এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্তম্ভিত।


