বোলপুরে নতুন হাট, সোনাঝুরি জঙ্গল সংরক্ষণে বড় সিদ্ধান্ত

বোলপুর: শান্তিনিকেতন মানেই খোলামেলা প্রকৃতি, ছায়াঘেরা সোনাঝুরি জঙ্গল, খোয়াই নদীর বাঁকে বাউল গানের সুর আর ঐতিহ্যবাহী শিল্প-সংস্কৃতির মেলবন্ধন। কিন্তু সম্প্রতি বাণিজ্য, পর্যটন এবং প্রতিদিনের জনসমাগমের ভারে সেই প্রকৃতি আজ বিপন্ন। পরিবেশ দূষণের অভিযোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (NGT) একাধিক মামলা চলার মধ্যেই এবার সোনাঝুরির বিখ্যাত হাট (Sonajhuri Haat) সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার বোলপুরে জেলা স্তরের বাণিজ্য সম্মেলন ‘সিনার্জি’ মঞ্চ থেকে এমনই ইঙ্গিত দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা।

Advertisements

শান্তিনিকেতনের বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাগৃহে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ সিংহ সহ জেলার একাধিক প্রশাসনিক কর্তা।

   

মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, “সোনাঝুরি হাট নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আমরা চাই না হাট বন্ধ হোক। তাই বোলপুরেই ঐতিহ্য বজায় রেখে বিকল্প জায়গায় নতুন হাট গড়ার পরিকল্পনা চলছে। তবে আদালত যদি বলে সোনাঝুরিতেই হাট থাকবে, তবে সেটাই মেনে নেওয়া হবে।” তাঁর কথায় স্পষ্ট আইনি চাপ যত বাড়ছে, ততই হাট অন্যত্র সরানোর সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে।

সোনাঝুরির এই হাট প্রথমে সপ্তাহে দু’দিন বসত শনিবার ও রবিবার। স্থানীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি কুটিরশিল্প, গৃহসজ্জা, পোশাক, গয়না থেকে শুরু করে মাটির কাজের সামগ্রী সবই মিলত সেখানে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ায় সপ্তাহে দু’দিনের হাট এখন রোজকার বাজারে রূপ নিয়েছে। পরিবেশকর্মীরা প্রথম থেকেই এই হাট প্রসঙ্গে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। তাঁদের মতে, একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এমন অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চলতে পারে না।

জাতীয় পরিবেশ আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলিতে মূল অভিযোগ বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ, প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট, পর্যটনের চাপ সামলানোর পরিকাঠামোর অভাব।  সেই প্রেক্ষিতে NGT প্রশাসনকে সতর্ক করে জানিয়েছে, পরিবেশগত ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে না এলে হাট বন্ধের নির্দেশ পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে।

Advertisements

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সম্ভাব্য নতুন হাট হবে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বাণিজ্য কেন্দ্র। প্লাস্টিক মুক্ত ও পরিবেশবান্ধব জোন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক পরিকাঠামো। গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা। লোকশিল্পী ও স্থানীয় বিক্রেতাদের অগ্রাধিকার। পর্যটকের ভিড় সামলানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম।

সরকার চাইছে, হাট সরলেও তার ঐতিহ্য, শিল্পীদের জীবিকা এবং পর্যটনের আকর্ষণ যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। সোনাঝুরি হাট শুধু একখণ্ড বাজার নয়, এটি বহু শিল্পীর রুজি-রুটির ভরসা। তাই পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া নয়, বরং পরিকল্পনা করে পরিবেশবান্ধব বিকল্প গড়ে তোলাই লক্ষ্য প্রশাসনের।

এখন অপেক্ষা আদালতের পরবর্তী নির্দেশের। একই সঙ্গে প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিকল্প স্থানে নতুন পরিকল্পিত হাট গড়ে তোলার জন্য। শান্তিনিকেতন তার প্রকৃতির স্বরূপ হারাবে না, আবার শিল্প-সংস্কৃতির অর্থনৈতিক ধারা শুকিয়েও যাবে না এই ভারসাম্য রক্ষাই এখন লক্ষ্য।