মিলন পণ্ডা, রামনগর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরে বেসরকারি স্কুলের হোস্টেল থেকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের (school student death) মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর উঠেছে খুনের অভিযোগও। ইতিমধ্যেই পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে স্কুলের মালিক প্রতাপ প্রামানিক, তাঁর স্ত্রী শ্রাবণী প্রামানিক এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রশান্ত সনবিঘ্ন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানপুর থানার কুলবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ প্রামানিক ও তাঁর স্ত্রী শ্রাবণী প্রামানিক স্থানীয় ভীমেশ্বরী বাজার এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুল ও হোস্টেল পরিচালনা করতেন। সেখানে পড়াশোনা করত ১৩ বছরের সায়নদীপ খাটুয়া, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। শনিবার বিকেলে তার সহপাঠীরা দেখে, সায়নদীপের গলায় গামছা জড়ানো এবং সে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। দ্রুত তাকে ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হোস্টেল ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠে নির্যাতন ও অবহেলার অভিযোগ। অনেকের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত খুন। এরপর গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ, ভাঙচুর হয় অভিযুক্ত শিক্ষক তথা সিভিক ভলেন্টিয়ারের বাড়িতেও।
মৃত ছাত্রের মামা নন্দন ভক্তা ভগবানপুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং সোমবার তাদের কাঁথি আদালতে তোলে। বিচারক স্কুল মালিক প্রতাপ প্রামানিককে তিন দিনের পুলিশি হেফাজত এবং তাঁর স্ত্রী ও সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রশান্ত সনবিঘ্নকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ভগবানপুর থানার ওসি শাহেনশা হক জানান, “তদন্তের স্বার্থে মূল অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
রবিবার সকালে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের হাতে সমস্ত ছাত্রদের ফিরিয়ে দেয় এবং পরে স্কুল ও হোস্টেল দু’টিকেই তালা বন্ধ করে সিল করে দেয় পুলিশ। এলাকাজুড়ে এখনো আতঙ্ক ও ক্ষোভের পরিবেশ।
মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে ফেরানো যাবে না, কিন্তু যারা দায়ী তাদের কড়া শাস্তি চাই। যেন আর কোনও পরিবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ঘটনার পেছনে মানসিক চাপ বা নির্যাতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ঘটনার ক্রমপর্যায় জানার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে হোস্টেল পরিচালনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের আচরণ সম্পর্কেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ভগবানপুর ও আশপাশের এলাকায় এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে স্কুলের ভিতরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল কীভাবে? আত্মহত্যা, না খুন? উত্তর খুঁজছে পুলিশ, আর অপেক্ষায় রয়েছে গোটা জেলা।


