দুর্গাপুর: পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে দ্বিতীয় বর্ষের এক মেডিক্যাল ছাত্রীর উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস গণধর্ষণ কাণ্ডে অবশেষে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশি তদন্ত ও টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন (TI) প্যারেড রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই জঘন্য অপরাধের মূল অভিযুক্ত হলেন ফিরদৌস শেখ নামে এক যুবক। পাশাপাশি, আরও পাঁচজনকে সহঅভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ওই তরুণীর প্রেমিক ও সহপাঠীও।
ঘটনাটি ঘটে ১০ অক্টোবর রাতে, দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সংলগ্ন জঙ্গলে। অভিযোগ, দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই গোটা রাজ্যে চাঞ্চল্য ছড়ায়। সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে এই মামলার নতুন মোড় প্রকাশ পায়।
Sierra-কে নতুন অবতারে ফেরাচ্ছে Tata, নভেম্বরের এদিন লঞ্চ
আদালতে টিআই প্যারেড রিপোর্ট পাঠ করা হলে জানা যায়, মূল অভিযুক্ত ফিরদৌস শেখ ছাড়াও পাঁচজন অভিযুক্তের মধ্যে একজন হলেন ওই ছাত্রীর প্রেমিক, যিনি এই কাণ্ডের “মূল ষড়যন্ত্রী বা মাস্টারমাইন্ড” বলে দাবি করেন মামলার আইনজীবী পার্থ ঘোষ।
তিনি জানান, “আমাদের কাছে থাকা তথ্য ও পুলিশের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে যে, ওই সহপাঠীই পরিকল্পনা করেছিল কীভাবে এবং কোথায় ঘটনাটি ঘটবে। ফিরদৌস এবং বাকিরা সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে।” এদিন ভার্চুয়াল শুনানিতে অভিযুক্তদের কোনও পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। নিজেরাই বিচারকের কাছে জামিনের আবেদন জানান অভিযুক্তরা, তবে আদালত সেই আবেদন খারিজ করে তাঁদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
বিচারক স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুত চার্জশিট দাখিল করতে হবে যাতে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত না হয়। পার্থ ঘোষ বলেন, “যদি পুলিশ আগামী ৩১ অক্টোবরের আগে চার্জশিট দাখিল করে, তবে দ্রুত বিচার শুরু হবে। চার্জ ফ্রেমিং সম্পন্ন হলেই মূল ট্রায়াল প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
এদিকে, অভিযুক্তদের মধ্যে ফিরদৌস শেখের নাম প্রকাশ পাওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন নৃশংসতার সাহস না পায়।
ওড়িশা থেকে পড়তে আসা ওই মেডিক্যাল ছাত্রী বর্তমানে মানসিক ট্রমায় ভুগছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁকে সুরক্ষার জন্য বিশেষ মহিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই মামলাটি এখন রাজ্যজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। একদিকে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে ছাত্রসমাজ ও মহিলা সংগঠনগুলো দাবি করছে এই মামলায় দ্রুত বিচার ও কঠোরতম শাস্তি প্রাপ্যদের দিতে হবে।


