কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রেলপথে ফের ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা। ট্রেনে ছিনতাইয়ের চেষ্টার জেরে ৪৫ বছর বয়সি সুরমা হাজরার হাত ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে রেল পুলিশ। তাদের নাম সামসাদ মহম্মদ এবং মহম্মদ ইমরান।
ঘটনা ঘটে ধৌলিএক্সপ্রেসে, যখন সুরমা হাজরা বাড়ি ফিরছিলেন। রেল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহিলা যাত্রীটির হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দু’জন। ছিনতাইকারীরা ব্যাগ টানাটানি করতে করতে একসময় তাঁর হাত রেললাইনের পাশে কোনও খুঁটিতে বা লৌহদণ্ডে আঘাত হানে, এবং সেই প্রচণ্ড ধাক্কায় হাতের একটি অংশ ছিন্ন হয়ে যায় বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তার পরেই তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা চিৎকার শুনে ছুটে এসে রেললাইনের ধারে গুরুতর জখম অবস্থায় সুরমা দেবীকে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও আঘাত অত্যন্ত গুরুতর এবং দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন।
ঘটনার পরই রেল নিরাপত্তা বাহিনীর (RPF) পাশাপাশি Government Railway Police (GRP) যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে। ট্রেনের যাত্রীদের বয়ান, ট্রেন থামার পর সন্দেহভাজনদের আচরণ এবং সিসিটিভি ফুটেজ সব মিলিয়ে তদন্তকারীরা দ্রুত দুই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেন। তার কিছু ঘণ্টার মধ্যেই সামসাদ মহম্মদ ও মহম্মদ ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়।
রেল পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল। ভুক্তভোগীর হাত ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় আমরা শোকাহত। দোষীদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে সবরকম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নিয়মিত যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে ছিনতাই, ব্যাগ টানা, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা বেড়ে চলেছে। রাতের ট্রেনে মহিলাদের নিরাপত্তা আরও সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
একজন যাত্রী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন “ট্রেনে নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিন কোনও না কোনও ঘটনা ঘটছে। এখন তো জীবনও নিরাপদ নয়!” রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। RPF–এর টহল বৃদ্ধি, সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি এবং স্টেশনে স্টেশনে মোবাইল টিম মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে এই মামলাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসাধীন সুরমা হাজরার পরিবার গোটা ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করেছে। তাঁরা জানিয়েছেন,“এভাবে কাউকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া যায়? আমরা চাই কঠোরতম সাজা হোক।”
ঘটনাটি শুধু রেলপথের নিরাপত্তা নিয়েই নয়, সামগ্রিকভাবে Bengal–এর পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যাত্রীদের দাবি, RPF–এর নিয়মিত টহল, ডিউটি স্টেশন মাস্টারদের সতর্কতা এবং ট্রেনে পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকলে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে সুরমা দেবী চিকিৎসাধীন, এবং এদিকে GRP তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। দুই অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হয়েছে, এবং পুলিশ তাদের রিমান্ড চেয়ে আবেদন জানিয়েছে।
