নৈহাটি: দেবী কালীকে সোনায় রুপায় সাজানোর ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। কিন্তু নৈহাটির বড়মা (Naihati Baro Ma) যেন প্রতিবছরই ছাপিয়ে যান নিজেকে। এ বছরও ব্যতিৃক্রম নয়। কালীপুজোর রাতে অরবিন্দ রোডের বিখ্যাত বড়মা মন্দিরে দেবীকে সাজানো হয়েছে ৭০ ভরি সোনার গয়না এবং প্রায় ১৫০ কেজি রুপোর অলংকারে। সেই রূপে আজ যেন এক অপার্থিব আবহ তৈরি হয়েছে নৈহাটির গঙ্গার ঘাট থেকে মন্দির পর্যন্ত।
সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ভক্তদের ঢল। গঙ্গার ঘাটে দণ্ডি কেটে একের পর এক ভক্ত এগিয়ে যাচ্ছেন মায়ের মন্দিরের দিকে। তাদের বিশ্বাস—নৈহাটির বড়মা অত্যন্ত জাগ্রত দেবী, যাঁর আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত বিপদ কেটে যায়।
রাত বাড়তেই শুরু হয় দেবীর অলংকরণ। মাচা বেঁধে পুরোহিত ও সেবায়েতরা সিঁড়ি বেয়ে উঠে একে একে মা-কে পড়ান মুকুট, নেকলেস, বালা, নূপুর, কোমরবন্ধ ও পায়ের গয়না। মায়ের ২১ ফুট উচ্চতার প্রতিমা এই অলংকারে সোনার আলোর মতো ঝলমল করে ওঠে।
এ বছর প্রায় ৫০০০ ভক্ত দণ্ডি কাটবেন বলে মন্দির কমিটি জানিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা অরবিন্দ রোড জুড়ে। মন্দির চত্বর থেকে স্টেশন রোড, গঙ্গার জেটি ঘাট—সব এলাকাই সেজে উঠেছে আলো, ফুল, ও রঙিন প্যান্ডেলে।
পুজো উপলক্ষে বড়মার মন্দিরে চলছে এলাহি আয়োজন। ভোগে থাকছে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, লুচি, চাটনি ও পায়েস। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত এই প্রসাদ গ্রহণ করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “বড়মার পুজো মানেই নৈহাটির উৎসব—এ যেন ধর্ম আর ভক্তির মিলনক্ষেত্র।”
নৈহাটির এই বড়মা কালীপুজো এখন শুধু জেলার নয়, গোটা রাজ্যের গর্ব। এমনকি বিদেশ থেকেও অনেক ভক্ত এই দিনে হাজির হন। বিশেষত লন্ডন, দুবাই ও ঢাকায় বসবাসকারী বাঙালিদের কাছে এই মন্দির ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
পুজোর প্রধান পুরোহিত বলেন, “প্রতিবছর মায়ের অলংকারের পরিমাণ বাড়ছে কারণ ভক্তদের দানও বাড়ছে। সবাই বিশ্বাস করেন, মা তাঁদের ইচ্ছা পূরণ করেন।” রাত গভীর হলে ঢাকের তালে, শঙ্খধ্বনি আর ভক্তদের “জয় মা কালী” স্লোগানে মুখরিত হয় চারদিক। আলো, ভক্তি আর ঐশ্বর্যের মিলনে নৈহাটির কালীপুজো যেন এক মহোৎসবে পরিণত হয়।
আগামী কয়েক দিন চলবে বড়মার ভোগ, নামসংকীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নৈহাটির মানুষজন যেমন ধর্মীয় উন্মাদনায় মেতে উঠেছেন, তেমনি দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ এই দেবীময় পরিবেশে।