শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা এলাকায় কৃষকদের এখন ঘুম নেই চোখে। আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ সতর্কতা বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, নাম “মন্থা” (Cyclone Montha)। মঙ্গলবার নাগাদ এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উৎকণ্ঠা।
ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে ধানচাষে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, এই সময় ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার মাঠে পাকা ধান কাটার মৌসুম। ঝড়-বৃষ্টি এলে ধান জমিতে নষ্ট হয়ে যাবে, পচে যাবে কিংবা ঝরে পড়বে—এই আশঙ্কাতেই কৃষকরা এখন মাঠে রাতদিন কাটাচ্ছেন। কেউ হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটছেন, কেউ আবার হাতে কেটে তড়িঘড়ি ঘরে তুলছেন ফসল।
স্থানীয় কৃষক মধুসূদন দোলই বললেন, “গত বছরও ঘূর্ণিঝড়ে অনেক ধান নষ্ট হয়েছিল। এবার যেন সেই দুর্ভোগ না হয়। এখনই ধান ঘরে তুলছি।” আরেক কৃষক হরিপদ জানা বললেন, “বৃষ্টি পড়লে ধানের দানা ঝরে যায়, আর মাঠে জল জমলে সব নষ্ট হয়ে যায়। এই ভয়েই আমরা দিনরাত ধান কাটছি।”
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘূর্ণিঝড় মন্থা পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া আনতে পারে। ফলে কাঁচা বা আধাপাকা ধানচাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধান ছাড়াও আলু চাষের প্রস্তুতিতেও প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। বিশেষত পোখরাজ জাতের আলুর বীজ পোঁতার সময় পিছিয়ে যেতে পারে।
ঘাটাল মহকুমা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা কৃষকদের বলেছি, যতটা সম্ভব দ্রুত পাকা ধান ঘরে তুলতে। মাঠে ধান শুকিয়ে রাখবেন না, আর ট্র্যাক্টর বা মেশিন খোলা মাঠে না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, কৃষকদের দাবি — চলতি বছরে ধানের দাম আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। বাজারে ১ কুইন্টাল ধানের দাম পড়ছে প্রায় ১৩০০–১৪০০ টাকা, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। তার ওপর যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়, তাহলে ঋণে ডুবে যাবেন বহু চাষি।
কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, “প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ে কৃষির ক্ষতি হলেও ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেতে অনেক দেরি হয়। প্রশাসনকে এবার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এদিকে, মন্থা ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতায় ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠক করেছে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থায় ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তবু চাষিদের মুখে একটাই কথা—“ফসলটাই আমাদের সব। এবার যদি ঝড়ে যায়, তাহলে ঘর ভেঙে যাবে।”



