বর্ধমান: চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উত্তাল পূর্ব বর্ধমান। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। দিনে দুপুরে নবজাতক চুরির মত ঘটনায় উত্তেজনা হাসপাতালে! পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় এক মহিলা এবং তাঁর মেয়েকে এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হল রিঙ্কি খাতুন ওরফে রুমকি খাতুন এবং তাঁর মা মিনিরা বিবি। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার। পুলিশ জানায়, হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে মাত্র ১৮ দিনের এক নবজাতককে চুরি করা হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে উদ্ধার করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, শিশুটির মা সেলেফা খাতুন মঙ্গলবার সকালে নিজের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে শিশুর চিকিৎসার জন্য আসেন। তিনি ও তাঁর মা প্রসূতি বিভাগের বারান্দায় বসেছিলেন। সেই সময় এক অচেনা মহিলা এসে শিশুটিকে আদর করার অনুরোধ করেন। বিশ্বাস করে সেলেফা তাঁকে শিশুটি কোলে দেন।
মুহূর্তের মধ্যেই ওই মহিলা শিশুটিকে নিয়ে সেখান থেকে উধাও হয়ে যান। হঠাৎ শিশুকে হারিয়ে আতঙ্কিত সেলেফা ও তাঁর মা চিৎকার শুরু করেন। হাসপাতালজুড়ে তৎক্ষণাৎ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর যায় বর্ধমান থানায়। পুলিশ দ্রুত হাসপাতাল ঘিরে তদন্ত শুরু করে এবং আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে।
এরই মধ্যে, টেলিভিশন চ্যানেল ও সামাজিক মাধ্যমে শিশুচুরির খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। খাগড়াগড়ের উত্তরপাড়া এলাকায় কিছু প্রতিবেশীর নজরে আসে, রিঙ্কি খাতুনের কোলে থাকা শিশুটি সম্প্রতি জন্মেছে বলে মনে হয়। সন্দেহ হয় তাঁদের। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রিঙ্কির ভাড়া বাড়িতে যায়। রিঙ্কি প্রথমে অজুহাত দিতে থাকলেও প্রতিবেশীরা বিষয়টি বুঝে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে খবর দেন।
বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে উদ্ধার করে ও মা-মেয়েকে গ্রেফতার করে। এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানান, “রিঙ্কি খাতুন ও তাঁর মা মিনিরা বিবিকে শিশুচুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা শিশুটি চুরি করে নিজেদের সন্তান বলে চালানোর চেষ্টা করছিলেন। প্রতিবেশীদের সচেতনতায় শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, কেন এই দুই মহিলা শিশুটিকে চুরি করেছিল, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, সন্তানহীনতার কারণেই হয়তো এমন অপরাধের পথে তাঁরা হেঁটেছিলেন। তবে পুলিশ এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। শিশুটিকে উদ্ধার করার পর চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ফের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
শিশুটির মা সেলেফা খাতুন জানান, “আমি ভেবেছিলাম আমার সন্তান আর ফিরবে না। পুলিশ এবং প্রতিবেশীদের জন্য আজ আমি আমার শিশুকে কোলে পেয়েছি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের মুহূর্ত।”
পুরো ঘটনাটি এখন বর্ধমান জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মানবিক দিক থেকে দেখলে, এই ঘটনায় যেমন এক তরুণী মায়ের জীবনে ফিরে এসেছে আলোর হাসি, তেমনই সমাজও আবার প্রমাণ করল সচেতনতা ও একতার শক্তি অনেক বড়।