রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) এবং নতুন নাম তোলার প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় বুথ লেভেল অফিসার বা BLO বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার এনিউমারেশন ফর্ম বিলি করছেন। কিন্তু প্রথম দিনেই সেই কাজে বিপত্তি দেখা দিল দক্ষিণ হাওড়ায়। পরিচয়পত্র ছাড়াই ফর্ম বিলি করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়লেন এক মহিলা BLO।
ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বুথে। বাগনান খালোড় কবিগুরু শিক্ষায়তনের শিক্ষিকা অনুপমা দাস এদিন সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত BLO হিসেবে এলাকায় যান ফর্ম বিলি করতে। কিছু বাড়িতে ফর্ম বিলির কাজ সেরে ফেললেও এক পর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চান। কিন্তু তখনই দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে BLO দের দেওয়া পরিচয়পত্র তিনি পাননি।
এ নিয়ে শুরু হয় বচসা। কয়েকজন স্থানীয় তাঁর কাজ আটকে দেন এবং পরিচয়পত্র ছাড়া ফর্ম বিলি করার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জগাছা থানার পুলিশ। পুলিশ এসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে মানসিকভাবে চাপে পড়ে অনুপমা দাস পরে এলাকা ছেড়ে চলে যান।
অনুপমা দাস জানান, “গতকাল বিকেল পর্যন্ত কালেক্টর অফিসে বসে ছিলাম, কিন্তু কোনও আই-কার্ড হাতে দেওয়া হয়নি। সকালে অফিস থেকে জানানো হয়, ফর্ম বিলি শুরু করতে হবে। তাই কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ শুরু করি।” তিনি আরও জানান, “আমার কাছে কমিশনের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো অনুমতিপত্র এবং অফিসিয়াল নির্দেশপত্র ছিল, কিন্তু স্থানীয়রা তা বিশ্বাস করেননি।”
এই ঘটনার পর জেলার অন্যান্য BLO-দের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাঁদেরও কোনও পরিচয়পত্র হাতে দেওয়া হয়নি। ফলে কাজ করতে গিয়ে এমন সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক BLO বলেন, “পরিচয়পত্র ছাড়া বাড়ি বাড়ি যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না আমরা সরকারি দায়িত্বে গেছি নাকি অন্য কেউ।”
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তিনি জানান, “পরিচয়পত্র তৈরি প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে সব BLO-দের ডিজিটাল অথরাইজেশন পাঠানো হয়েছে। যেটা সরকারি ভাবে বৈধ। শীঘ্রই তাঁদের হাতে ফিজিক্যাল আই-কার্ড তুলে দেওয়া হবে।”
ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়া আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে BLO-দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি এবং তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব রয়েছে। তবে দক্ষিণ হাওড়ার এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, পরিচয়পত্র ছাড়া এমন দায়িত্ব দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? BLO-দের নিরাপত্তা এবং সম্মান রক্ষায় প্রশাসনের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন, বলছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।


