ভাটপাড়া: ফের উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ (Bhattpara firearms)। বারাকপুর কমিশনারেটের অধীনস্থ পুলিশি তৎপরতায় ধরা পড়ল এক দুষ্কৃতী। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অস্ত্র উদ্ধারের এই ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক। ধৃতের নাম মহম্মদ আসলাম, বয়স প্রায় ৩০। তার বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে দুইটি পাইপগান এবং ১০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গোপন সূত্রে একাধিকবার তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল যে ভাটপাড়া পুরসভার ৬ নম্বর গলির একটি বাড়িতে অস্ত্র মজুত রাখা হয়েছে। সেই তথ্য যাচাই করতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশেষ অভিযান চালায় ভাটপাড়া থানার পুলিশ। অভিযান চলাকালীন আসলমের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় দুইটি দেশি পাইপগান এবং ১০ রাউন্ড কার্তুজ। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অস্ত্রগুলি হয় পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল অথবা এলাকায় কোনও দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত হামলার জন্য জমা রাখা হয়েছিল। তবে সবকিছু স্পষ্ট জানতে ধৃতকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রের উৎস এবং চূড়ান্ত গন্তব্য দুইয়েরই সন্ধান পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তার জেরার ভিত্তিতেই আরও দুষ্কৃতীর নাম উঠে আসতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
শুক্রবার ধৃতকে বারাকপুর কোর্টে তোলা হলে বিচারক তাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ হেফাজতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং অস্ত্রচক্রের বৃহত্তর চেহারা তুলে আনার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে এই ঘটনার পরেই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিজেপির নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মজুত করছে অস্ত্র। তাঁদের বক্তব্য, “ভোটের আগে পরিবেশ অশান্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসবে।”
বিজেপি আরও দাবি করেছে যে ভাটপাড়া দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক হিংসা ও দুষ্কৃতী রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নতুন নয়, তবে এই সময়ে অস্ত্র মজুতের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
তৃণমূল অবশ্য সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে এই অভিযোগ। ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর তরুণ শাহ সাউ বলেন, “অপরাধীরা যে-ই হোক, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনো যোগ নেই। বিজেপি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে মানেই তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে এই ধারণা ভুল। পুলিশ তৎপর রয়েছে, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য শক্ত অবস্থানে রয়েছে।”
ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, বাটানগর এই গোটা এলাকা বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক সংঘাতের কেন্দ্র। আগে বহুবার বোমাবাজি, গুলির লড়াই এবং অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত অভিযোগ সামনে এসেছে। ফলে নতুন করে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুরো এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি দুষ্কৃতী-চিহ্নিত বাড়ি ও গলিতে পুনরায় তল্লাশি চালানো হতে পারে। নির্বাচনের আগে যেকোনো অশান্তি ঠেকাতে প্রশাসন কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
