মেদিনীপুর: বাংলাদেশ থেকে এসে বাংলার মাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস— এমনই এক আশ্চর্য ঘটনা সামনে এল পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহর থেকে। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি এলাকা, নাম ‘হঠাৎপল্লী’ (Bangladeshi colony)। প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি বাড়ি নিয়ে গড়ে ওঠা এই পল্লীতে বর্তমানে বাস করছেন বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষজন। তাঁদের অধিকাংশই এসেছেন প্রায় ২০ বছর আগে, বাংলাদেশের ভোলা জেলা থেকে।
বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা ১৯৯৫ সালের পর দফায় দফায় এই রাজ্যে আসেন এবং মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। প্রথমে কয়েকটি বাড়ি হলেও, ২০০২ সালের পর থেকে এলাকা দ্রুত জনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখন এটি সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রায় সবাই বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন একসময়।
কিন্তু সাম্প্রতিক SIR (State Investigation Report) ও NRC (National Register of Citizens) নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে হঠাৎপল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁদের কারোর নাম ছিল না, ফলে এবার তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে অনেকে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড সবই পেয়েছেন, তবুও পুরনো রেকর্ড না থাকায় অজানা আশঙ্কা গ্রাস করেছে সবাইকে।
একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে থাকছি। জমি কিনেছি, ট্যাক্স দিচ্ছি, সন্তানদের পড়াচ্ছি। এখন আবার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, আমরা খুব চিন্তায় আছি।”
অন্যদিকে, এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর অনিমা সাহা জানিয়েছেন, “বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা তাঁদের কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। যাঁদের প্রয়োজনীয় নথি রয়েছে, তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না।”
তাঁর দাবি, অধিকাংশ পরিবারই বৈধ নথি যেমন জমির দলিল, বিদ্যুৎ বিল, আধার কার্ড ইত্যাদি জমা দিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই এলাকার মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
হঠাৎপল্লীর বাসিন্দারা এখন সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তাঁদের যেন ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। কারণ, এত বছর ধরে তাঁরা এখানেই বসবাস করছেন, তাঁদের সন্তানরাও এখানে বড় হয়েছে, তাই এখন ফিরে যাওয়া অসম্ভব।
এলাকার মানুষ এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। কেউ কেউ বলছেন, যদি তাঁদের নাগরিকত্ব স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তবে জীবনের সমস্ত নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।


